এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদী লুনা বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিপ্লবের নায়কদের ঋণ শোধ হবার নয়। গুম, খুন, ক্রস ফায়ারের মাধ্যমে বিএনপির নেতাকর্মীদের রাস্তায় দাঁড়াতে দেয়নি বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার। ছাত্ররা কোটা আন্দোলন দিয়ে শুরু করেছিলো আর শেষ হয়েছিলো ছাত্র-জনতার বিপ্লব এর মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে।
এসময় তিনি আরও বলেন, বিচার একটি চলমান প্রক্রিয়া। রাজনৈতিক সরকার ছাড়া কেউ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে পারে না।আমাদের সকলের ঐক্য ধরে রাখতে হবে। বিচার হীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সাদাকে সাদা অন্যায়কে অন্যায় বলতে হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচনে জনগনের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করতে সকলের সচেষ্ট থাকতে হবে। ৫ আগস্ট ২০২৫ (মঙ্গলবার) সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দিনব্যাপী নানাবিধ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। বিকাল ৩ ঘটিকায় প্রশাসনিক ভবন চত্বর থেকে র্যালি শুরু হয়। র্যালিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। বিকাল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটরিয়ামে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক, পেশাজীবী ও ছাত্র নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে “জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪: বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের করণীয়” শীর্ষক আলোচনা সভা, শহীদ পরিবারকে উপহার প্রদান ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্টপোষকের বক্তব্যে প্রফেসর ড. মোঃ আলিমুল ইসলাম শহীদ আবু সাঈদ, শহীদ ওয়াসিম, শহীদ মীর মুগ্ধসহ সকল শহীদেরকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ছিল বৈষম্য ও শোষণের বিরুদ্ধে একটি ঐতিহাসিক প্রতিবাদ, যা বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাইলফলক। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান একটি ঐতিহাসিক প্রতিরোধ, যেখানে ছাত্রসমাজ, পেশাজীবী, শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রীয় বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে দাঁড়িয়েছিল। সেই অভ্যুত্থান ছিল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। বিগত সময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সরকারের দোসররা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর যে নির্যাতন করেছে, তাদের বিচার আমি করে যাবো। তিনি বলেন, প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।
ভাইস চ্যান্সেলর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্য কোড করে বলেন, “যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবেই তুমি বাংলাদেশ। আমার ভোট আমি দিবো, যাকে খুশি তাকে দিবো”। অবিলম্বে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জামায়াতে ইসলামী সিলেট জেলার আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে দৃশ্যমান বিচার, জুলাই সনদকে আইনগতভাবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে সংযুক্ত ও নির্বাচন যথাসময়ে করতে হবে। সর্বোপরি রাজনৈতিক বিরোধ ভুলে স্বাধীনতার মূল্যবোধ রক্ষার জন্য ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
সিকৃবি ট্রেজারার প্রফেসর ড. এ.টি.এম. মাহবুব-ই-ইলাহী বলেছেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান ছাত্রদের রাজাকার বলে আখ্যায়িত করার পর হতে গণমানুষের মধ্যে ফ্যাসিবাদ বিরোধী উদগীরণ আমরা দেখেছি। এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ফ্যাসিবাদী আইন কায়েম করেছে, যারা ভয়ের রাজনীতি ধারণ করেছে, ছাত্রদের কন্ঠরোধের চেষ্টা করেছে তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সিকৃবি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।
সিকৃবি রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মোঃ আসাদ-উদ-দৌলার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্টপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিকৃবি ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আলিমুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদী লুনা, সিলেট জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী, শহীদ সাংবাদিক এ টি এম তুরাবের ভাই আবুল আহসান মো: আজরফ (জাবুর), এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক কৃষিবিদ গোলাম মর্তুজা, ট্রেজারার প্রফেসর ড. এ.টি.এম. মাহবুব-ই-ইলাহী, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সামিউল আহসান তালুকদার, প্রক্টর প্রফেসর ড. জসিম উদ্দিন আহাম্মদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠান শেষে রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়।