বাংলাদেশের মৎস্য খাতে গবেষণা, প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি
এগ্রিলাইফ ডেস্ক: শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবীব মৎস্য খাতে গবেষণায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘জাতীয় মৎস্য পদক ২০২৫’ অর্জন করেছেন। আজ রাজধানীতে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, অধ্যাপক হাবীব এর হাতে এই পদক তুলে দেন।
অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবীবের গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন দেশের মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তিনি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ইলিশ মাছ কৌটাজাতকরণের প্রযুক্তি এবং দিনে ও রাতে নিরাপদ শুঁটকি উৎপাদনে এসএইউ-ডিওএফ স্মার্ট সোলার সান ড্রায়ার উদ্ভাবন করেন। তিনি ‘Marine Biodiversity Portal of Bangladesh’ এবং ‘Freshwater Biodiversity Portal of Bangladesh’ নামক দুটি তথ্যসমৃদ্ধ ওয়েবসাইটেরও প্রতিষ্ঠাতা, যা দেশের জলজ জীববৈচিত্র্যের তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণায় গবেষক ও আগ্রহীদের জন্য এক অনন্য প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ইতিমধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তার নেতৃত্বেই দেশের জলসীমা থেকে বিশ্বের নতুন তিনটি সামুদ্রিক মাছের প্রজাতি—Chelonodontops bengalensis, Pomacentrus bangladeshius ও Glaucostegus younholeei আবিষ্কৃত হয়েছে।
অধ্যাপক হাবীব সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ও সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণামূলক তিনটি বই সহ বেশ কয়েকটি বিজ্ঞান ভিত্তিক বই ও পাঠ্যবই রচনা করেছেন। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো তার গবেষণা দলের তোলা সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পানির নিচের প্রবাল ও অন্যান্য জীব বৈচিত্র্যের ছবি ও তথ্য সম্বলিত একটি অ্যালবাম বই ইউনেস্কো কর্তৃক প্রকাশিত হয়। তিনি মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে সাধারণ ও মাদ্রাসা শিক্ষায় ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেনীর কৃষি শিক্ষা বইয়ের মৎস্যবিজ্ঞান অংশের লেখক যা ২০১২ সাল থেকে অদ্যাবধি বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে পঠিত হয়ে আসছে। তার লেখা চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ সংক্রান্ত বই “Post-Harvest Processing, Packaging and Inspection of Frozen Shrimp: A Practical Guide” দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে।
তার গবেষণার পরিধিও ব্যাপক। ইতোমধ্যে তিনি মৎস্য এবং সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ক ৬০টিরও বেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন। তিনি বাংলাদেশে প্রাপ্ত সামুদ্রিক মাছের তালিকা হালনাগাত করেন যেখানে তিনি ৭৪০টি প্রজাতির মাছের কথা উল্লেখ করেছেন যেটি পূর্বে ৪৭৫ টি বলে প্রচলিত ছিল। তিনিই প্রথম বাংলাদেশে ইউনেস্কোর সহযোগিতায় ই-ডিএনএ প্রযুক্তির মাধ্যমে সুন্দরবনের জলজ জীববৈচিত্র্য নির্ণয়ে সমীক্ষা পরিচালনা করেন। এছাড়াও তার উদ্ভাবিত মৎস্য পণ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক পেটেন্ট রয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি। তিনি WESTPAC, JSPS এবং Ocean Biomolecular Observing Network (OBON)-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার বৈজ্ঞানিক কমিটিতে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদ চালু করায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
জাতীয় মৎস্য পদক প্রাপ্তিতে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুল লতিফ অধ্যাপক হাবীবকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “এটি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি গর্বের বিষয়। আমরা শেকৃবি পরিবার তার এই অর্জনের জন্য অত্যন্ত আনন্দিত।” এছাড়াও উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ বেলাল হোসেন এবং ট্রেজারার প্রফেসর মোঃ আবুল বাশার এই অর্জনে অধ্যাপক হাবীবকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেছেন।