বিনাধান-২১ এর শস্যকর্তন উপলক্ষে মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত: ফলন হেক্টর প্রতি ৫টন

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট - বিনা এর গোপালগঞ্জ উপকেন্দ্র বিনাধান-২১ এর শস্যকর্তন উপলক্ষে মাঠ দিবস আয়োজন করেছে । গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বুধবার মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাদারীপুর জেলার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক জনাব উৎপল রায়, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজৈর উপজেলার উপজেলা কৃষি অফিসার শাশ্বতী ছন্দা দেবনাথ, এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অত্র উপজেলার অতিরিক্ত উপজেলা কৃষি অফিসার জনাব সাখাওয়াত হোসেন এবং উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিনা উপকেন্দ্র, গোপালগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জনাব ড. মো. হারুন অর রশিদ।

প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জনাব ড. মো. হারুন অর রশিদ বলেন, বিনাধান-২১ স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন একটি আউশ ধানের জাত। জাতটির জীবনকাল ১০৫ দিন অর্থাৎ বীজ তলায় বীজ বপন থেকে ফসল কাটা পর্যন্ত মোট ১০৫ দিন সময়ের প্রয়োজন হয়। গবেষকরা উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে সর্বোচ্চ ফলন পেয়েছিলেন ৫.৫ টন/ হেক্টর অর্থাৎ প্রতি শতাংশে ২০ কেজি ফলন পেয়েছিলেন।

তিনি আরও জানান বিনা উপকেন্দ্র, গোপালগঞ্জের মাধ্যমে মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানার হোসেনপুর ইউনিয়নের নাগরদি গ্রামের কৃষক হরিচাঁদ বালা বিনাধান-২১ আবাদ করেছিলেন চলতি আউশ মৌসুমে যা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে ধানটির শস্য কর্তন করা হয়। উক্ত শস্য কর্তনে রাজৈর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিনয় সরকারসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং অত্র গ্রামের কৃষক কৃষাণীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত কৃষক হরিচাঁদ বালা বলেন, তিনি ১০৭ দিন আগে এই বীজ বপন করেছিলেন এবং ২৫ দিন বয়সের চারা রোপণ করে অদ্য ২৪/০৯/২০২৫ তারিখে কর্তন করেন। উনি কর্তনকৃত জমির প্রতি শতাংশ থেকে প্রায় ২০ কেজি ধানের ফলন পান যা হেক্টরে প্রায় ৫ টনের সমান।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধান অতিথি মাদারীপুর জেলার অতিরিক্ত উপ পরিচালক জনাব উৎপল রায় বলেন, বিনা তার গবেষণার মাধ্যমে অনেক নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে যা দেশের কৃষি উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। বিনার এমনই একটা উচ্চ ফলনশীল জাত বিনাধান- ২১ এবং এই জাতটি এই এলাকার জন্য খুবই উপযোগী তার প্রমাণ হচ্ছে আজকের এই শস্যকর্তনের ফলাফল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত কৃষাণীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন কৃষি সূচনা যেমন নারীদের হাত দিয়ে শুরু হয়েছিল আমরা আশা করি আগামীতে এই এলাকায় বিনাধান-২১ জাতটি চাষাবাদ করতে কৃষানীরা নিজেরা উদ্যোগী হবেন এবং অপরাপর কৃষকদেরকে উৎসাহিত করবেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশেষ অতিথি রাজৈর উপজেলার উপজেলা কৃষি অফিসার শাশ্বতী ছন্দা দেবনাথ বলেন, আউশ ধানের এই জাতটি সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে এবং স্থানীয় কৃষকরা যৌথভাবে এই জাতটি চাষ করলে অধিক ফসল ঘরে তুলতে পারবেন ফলে আর্থিকভাবে তারা লাভবান হবেন। তিনি আরো বলেন বিনা ভবিষ্যতে এরকম আরো উন্নত এবং নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করে ও কৃষকদের মাঝে জাতগুলো সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের কৃষক ও কৃষিতে ব্যাপক অবদান রাখবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অত্র উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা জনাব মোঃ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বিনাধান-২১ এর ফলন খুবই চমৎকার এবং এই জাতটি কৃষকের মাঝে আগামীতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতি বিনা উপকেন্দ্র গোপালগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জনাব ড. মো. হারুন অর রশিদ বলেন এই বিনাধান-২১ জাতটি আফ্রিকার Nerica জাত থেকে গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয়েছে বিধায় জাতটি কম সেচ সুবিধায় এবং তুলনামূলক উচু জমিতে উচ্চ ফলন প্রদান করার ক্ষমতা সম্পন্ন। জাতটি থেকে পাওয়া চাল ঝরঝরে এবং সুস্বাদু। জীবনকাল খুবই কম হওয়ায় অল্প সময়ে কৃষক ভালো ফলন পেতে পারেন। এতে সার, সেচ ও কীটনাশক এর পরিমাণ খুবই কম প্রয়োজন হয়। তিনি আশাবাদ করেন কৃষকরা এই জাতটি আগামীতে এই এলাকায় ব্যাপকভাবে চাষ করবেন।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন বিনা উপকেন্দ্র গোপালগঞ্জের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, জনাব সৌরভ অধিকারী। এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিনা উপকেন্দ্র গোপালগঞ্জের সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জনাব নির্মল কুমার দে।

অনুষ্ঠানে প্রায় শতাধিক কৃষক ও কৃষাণী স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন এবং উক্ত ধানের চাষাবাদে ব্যাপকভাবে আগ্রহ প্রকাশ করেন।