বাকৃবির হোটেলগুলোতে অস্বাস্থ্যকর খাবার, মূল্য চড়া, নেই নজরদা‌রি

বাকৃ‌বি প্রতি‌নি‌ধি: কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার প্রাচীনতম বিশ্ব‌বিদ‌্যালয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বাকৃবিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন খাবারের চাহিদার বেশির ভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত ৮‌টি হোটেলের মাধ্যমে পূরণ হয়ে থাকে। অস্বাস্থ্যকর ও চড়া মূল্যে একরকম বাধ্য হয়েই খাবার ক্রয় ক‌রে খা‌চ্ছেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন সময় তারা হোটেলগুলোর খাবারের মান ও দাম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি করলেও পাননি সমাধান। প্রশাসনের নজরদারির অভিযোগ তু‌লে‌ছেন অ‌নে‌কে।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে জানান, সময়ের সাথে হোটেলগুলোর খাবারের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। ফলে শিক্ষার্থীরা সহজেই ফুড পয়জনিংসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেকটা যেন টাকা দিয়ে বিষ কিনে খাওয়ার মতো অবস্থা! একসময় হোটেলগুলোতে ৩০ টাকায় পেট ভরে খাওয়া যেত, এখন সেটা আর নেই। খাবারের দাম বাড়ার সা‌থে মাছ-মাংসের আকারও ছোট হ‌য়ে‌ছে ।

সরেজমিন হোটেলগুলো ঘুরে দেখা যায়, অস্বাস্থ্যকর প্লাস্টিকের পুরনো বোতলে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। নোংরা ফ্রিজে একসাথে মাছ, মাংস ও শাকসবজি সংরক্ষণ করা হ‌য়ে‌ছে। পুরনো পোড়া তেল বারবার ব্যবহার করে সিংগারা, পুরি, মাছ ও বড়া ভাজা হচ্ছে। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে কালো পাতিলে রান্না করা হচ্ছে মাছ-মাংস। প্লেটগুলো ব্যবহার শেষে ভালোভাবে না ধুয়ে হালকা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে আবার পরিবেশন করা হচ্ছে।

মূল্য কেমন
খোঁজ নি‌য়ে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের দোকানগুলোতে ডিমের হালি ৪৫ টাকা বি‌ক্রি হ‌চ্ছে—অর্থাৎ প্রতি ডিমের বাজারমূল্য সাড়ে ১১ টাকা। কিন্তু হোটেলগুলোতে একেকটা ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। ৫০–৫৫ গ্রাম মুরগির মাংস পিছ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। কয়েক মাস আগেও এক প্লেট খিচুড়ি ছিল ১৫ টাকা, এখন তা ২০ টাকা। কোন হো‌টে‌লে ৩০ টাকা। আগে ৫ টাকার রুটির যে আকৃতি ছিল, এখন তা ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৪৫–৫০ গ্রাম রুই মাছের টুকরা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। বাজারে সহজলভ্য হলেও হোটেলগুলোতে পাঙ্গাস মাছও দামে চড়া। মাত্র ৪০-৪৫ গ্রাম ম‌তো পাঙ্গাস মাছের পিছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। আর ছুটির দিনে একটুকরো গরুর মাংস খেতে গেলেও দামে শতবার ভাবতে হচ্ছে। ৫০–৫৫ গ্রাম গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ
শিক্ষার্থীরা জানান, খাবার খাওয়া হয় দেহে শক্তি যোগাতে, মনকে প্রফুল্ল রাখতে। কিন্তু হোটেলগুলোতে যা বিক্রি হয়, তা যেন বিষ! না মানা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি, না ঢেকে রাখা হচ্ছে খাবার। ডায়রিয়া, পেটের পীড়া আর ফুডপয়জনিং যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। তবুও হ‌লেগু‌লো‌তে খাবা‌রে নিম্নমান এবং ক্লাস পরীক্ষার চা‌পে এই খাবার অব‌হেলা করার সু‌যোগ নেই। দীর্ঘ সময় তা গ্রহ‌নের ফ‌লে বড় ধ‌র‌নের শারী‌রিক জ‌টিলতার সম্ভাবনাও র‌য়ে‌ছে। এইসব বন্ধ করতে হলে প্রশাসনের তৎপরতা বাড়াতে হবে। যদি হোটেল মালিকরা স্বাস্থ্যবিধি মানতে ও খাবারের দাম কমাতে রাজি না হয়, তাহলে এসব দোকান সিলগালা করে দেওয়া হোক।

পু‌ষ্টিবিদদের মতামত
ফুড টেকনোলজি ও গ্রামীণ শিল্প বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গোলজারুল আজিজ জানান, হোটেলগুলোতে বিভিন্ন ধরনের অস্বাস্থ্যকর রুচিবর্ধক উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এছাড়াও খাবার প্রস্তুতির অনিয়ম ও সঠিক তাপমাত্রা না মানার ফলে খাবারের পুষ্টিমান নষ্ট হচ্ছে । ফলে শিক্ষার্থীরা যা খাচ্ছে, তা পুষ্টি সমৃদ্ধ নয়।

এছাড়াও তি‌নি আরেও জ‌ানান, মাছ, মাংস এবং শাকসবজি একই ফ্রিজে সংরক্ষণ করার কারণে সংক্রামক জীবাণু খাবারে ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ‌্যঝু‌ঁকি বাড়াচ্ছে। অন‌্যদি‌কে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি খাবার গ্রহণের ফলে শিক্ষার্থীদের শরীর ও মানসিক স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অনেকেই পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারছে না, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে এবং পেটের বিভিন্ন পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।

দোকা‌নি‌রা যা ব‌লে‌ছেন
দোকান মা‌লিকরা জানান, আ‌গে খ‌ড়ির বোঝা ছিল ১৫০ টাকা। এখন তা ১৭০ টাকায় বি‌ক্রি হ‌চ্ছে। তেল, পেয়াজ ও মসলার দামও বে‌ড়ে‌ছে। অ‌নেকক্ষে‌ত্রে শিক্ষার্থীদের কা‌ছে ৫ টাকার ছোট নোট না থাকায় টাকা না দি‌য়েই চ‌লে যায়। তাছাড়াও আমরাও ক্ষুদ্র লা‌ভের আশায় ব‌্যবসা ক‌রি।

প্রশাসনের মতামত
প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম জানান, “শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে এসে এখনও কোনো অভিযোগ দেয়নি। যদি তারা নির্দিষ্ট কোনো দোকান সম্পর্কে অভিযোগ দিত, তাহলে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই পদক্ষেপ নিতাম। খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষায় ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও ক্যাম্পাসে মনিটরিং করতে আগ্রহী।”