রোটারিয়ান ড. মো. হেমায়েতুল ইসলাম আরিফঃ
সারসংক্ষেপঃ চাকরির প্রবেশের বয়স উম্মুক্ত রাখার ফলে সমাজের দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং যোগ্য ব্যক্তিরা চাকরিতে প্রবেশ করতে সক্ষম হবেন, যা সামগ্রিকভাবে জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। বিভিন্ন কারণে যারা জীবনের শুরুর দিকে চাকরিতে যোগ দিতে পারেননি, তারা সুযোগ পাবেন এবং নিজেদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে কর্মক্ষেত্রে নতুন মূল্য সংযোজন করতে পারবেন। এভাবে দেশের কর্মসংস্থান ব্যবস্থার মান উন্নত হবে। তবে, চাকরিতে অবসরের নির্দিষ্ট বয়সসীমা রাখার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের জন্য কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ তৈরি হবে। এই ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কর্মদক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতা বজায় রাখতে হলে নতুন ও তরুণ মেধার কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এতে দেশীয় অর্থনীতি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে নতুন উদ্ভাবনী ধারণা এবং আধুনিক চিন্তা-ভাবনার প্রতিফলন ঘটবে।
চাকরির প্রবেশের বয়স নির্ধারণ
চাকরির প্রবেশের বয়স নির্ধারণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, যা দেশের যুবকদের কর্মসংস্থান এবং জাতীয় অর্থনীতির জন্য বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশসহ অনেক দেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট বয়সসীমা নির্ধারিত থাকে, যা সাধারণত ৩০-৩৫ বছরের মধ্যে হয়ে থাকে। তবে, চাকরির প্রবেশের বয়স উম্মুক্ত করার প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা করলে নিম্নোক্ত কিছু বিষয় উঠে আসে:
১. যোগ্য প্রার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ:
চাকরির প্রবেশের বয়স উম্মুক্ত করলে বয়সের কারণে অনেক যোগ্য প্রার্থী যারা বিভিন্ন কারণে পূর্বে আবেদন করতে পারেননি, তারা পুনরায় সুযোগ পাবেন। বিশেষত, যারা উচ্চশিক্ষা বা অন্যান্য বিশেষ কোর্স করে সময় নিয়েছেন, তাদের জন্য এই সুবিধা হবে। এতে সমাজে বৈচিত্র্য ও মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার সম্ভব হবে।
২. অর্থনৈতিক চাপ হ্রাস:
চাকরির বয়স উম্মুক্ত করা মানে হলো প্রতিযোগিতার দিক থেকে চাকরি প্রার্থীদের বয়সের কোনো বাধা থাকবে না। এটি তরুণদের উপর দ্রুত চাকরির জন্য চাপ কমাতে পারে, যা মানসিক এবং সামাজিক চাপও হ্রাস করবে। দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
৩. কর্মদক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সুযোগ:
চাকরির প্রবেশের বয়স সীমা উম্মুক্ত থাকলে প্রার্থীরা বয়সে বড় হলেও অধিক অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন। এর ফলে তারা চাকরির ক্ষেত্রে নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা এবং অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করতে সক্ষম হবেন, যা দেশীয় কর্মক্ষেত্রের উন্নয়নেও ভূমিকা রাখতে পারে।
৪. আবেদনকারীর প্রতিযোগিতায় স্বচ্ছতা:
যদি শুধুমাত্র অবসরের বয়স নির্ধারণ করা হয়, তাহলে চাকরির ক্ষেত্রেও সমান সুযোগ থাকবে। প্রার্থীরা তাদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং যোগ্যতা অনুযায়ী প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন, যার মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা বাড়বে।
৬. সরকারি এবং বেসরকারি খাতের ভারসাম্য:
চাকরির প্রবেশের বয়স উম্মুক্ত করার ফলে সরকারি এবং বেসরকারি চাকরির মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়তে পারে, যা কর্মদক্ষতা এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
চাকরির প্রবেশের বয়স উন্মুক্ত রাখা মূলত যোগ্য প্রার্থীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টির একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এটি এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে বয়সের বাধা না রেখে, প্রার্থীর দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, এবং যোগ্যতা মূল্যায়ন করা হয়। ফলে, বিভিন্ন কারণে যারা নির্দিষ্ট বয়সসীমার কারণে চাকরির বাইরে থেকে যান, তাদের জন্যও সমানভাবে সুযোগ তৈরি হয়। এটি নিম্নলিখিত কারণগুলোকে প্রভাবিত করে:
৭. অবহেলিত মেধার ব্যবহার:
অনেক প্রার্থী, যাদের উচ্চশিক্ষা, প্রশিক্ষণ বা ব্যক্তিগত কারণে চাকরিতে প্রবেশের বয়স পেরিয়ে যায়, তারা যদি যোগ্য হন তবে তারা অবহেলিত থেকে যান। বয়স উন্মুক্ত রাখলে এই মেধার সঠিক ব্যবহার করা সম্ভব হবে, যা একটি রাষ্ট্রের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে।
৮. বৈচিত্র্যময় কর্মদক্ষতা:
বয়সের সীমাবদ্ধতা না থাকার ফলে বিভিন্ন বয়সের লোকজন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারবেন, যার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজন্মের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার মিশ্রণ ঘটবে। এটি কর্মক্ষেত্রে নতুনত্ব আনার পাশাপাশি সমস্যা সমাধানের দক্ষতাকে বাড়িয়ে তুলবে।
৯. সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাধা কমানো:
বয়সের সীমাবদ্ধতা তুলে দেওয়ার ফলে বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে পিছিয়ে পড়া মানুষও নতুন করে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন। এটি কর্মসংস্থানে সামাজিক সমতা আনার দিকে এক ধাপ অগ্রসর হতে সহায়ক হবে।
সুতরাং, চাকরির প্রবেশের বয়স উম্মুক্ত রাখা যোগ্য প্রার্থীদের জন্য সুযোগ তৈরি করার পাশাপাশি দেশ ও সমাজের জন্য একটি উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
অবসরকালীন ব্যবস্থা:
অবসরকালীন ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনায় দেখা যায় যে, চাকরির প্রবেশের বয়স উম্মুক্ত রাখা হলেও অবসরের নির্দিষ্ট বয়সসীমা নির্ধারণ করার মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব। কর্মীরা দীর্ঘ সেবা জীবনে তাদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং মেধা দিয়ে প্রতিষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করবেন, তবে নির্দিষ্ট সময়ে অবসর নিয়ে নতুন প্রজন্মের জন্য কর্মক্ষেত্র উন্মুক্ত করবেন। এই ব্যবস্থা একদিকে যেমন কর্মদক্ষতা বজায় রাখতে সহায়ক, অন্যদিকে নতুন মেধা ও সৃষ্টিশীলতার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে।
অবসরের নির্দিষ্ট বয়সসীমা কার্যকর থাকলে প্রতিষ্ঠানের জন্য পরিকল্পিত জনশক্তি ব্যবস্থাপনা সম্ভব হয়। কর্মজীবীদের নির্দিষ্ট বয়সে অবসর নেওয়ার ফলে তারা কাজের চাপমুক্ত হন এবং তাদের দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা নতুনদের হাতে সঞ্চালিত হয়। এতে তরুণ প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়, যা জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অবসর ব্যবস্থার এই কাঠামো কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখানে কর্মীর অভিজ্ঞতা এবং নতুনদের উদ্যম মিলে একটি উদ্ভাবনী ও উৎপাদনশীল কর্মপরিবেশ গড়ে ওঠে। ফলে, কর্মক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ও নতুনত্বের মিশ্রণ দেশকে উন্নয়নের আরও দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যায়।
লেখকঃ ডেপুটি চিফ ভেটেরিনারি অফিসার, ভেটেরিনারি ও এনিমেল সায়েন্সেস বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটি (বিএলএস), সাধারন সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দলোন (বাপা) রাজশাহী, সভাপতি (২০২৩-২৪), রোটারি ক্লাব অফ রাজশাহী সেন্ট্রাল; যুগ্ম নির্বাহী সম্পাদক (বাংলাদেশ লাইভস্টক জার্নাল; ISSN 2409-7691), সম্পাদক সুজন, (রাজশাহী মেট্রোপলিটন) এবং সভাপতি, বিবিসিএফ, রাজশাহী।