অসুস্থদের খোঁজখবর নেওয়া আমাদের সামাজিক দায়িত্ব

ইসলামিক ডেস্ক: ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যেখানে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, সহানুভূতি ও দায়িত্ববোধের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তারই একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো অসুস্থদের খোঁজখবর নেওয়া বা রোগী দেখতে যাওয়া। বর্তমান সমাজে প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে আমাদের মাঝে ব্যক্তিগত যোগাযোগ কমে যাচ্ছে, মানুষ ধীরে ধীরে একে অপরের খোঁজ রাখা ভুলে যাচ্ছে। অথচ ইসলামে রোগী দেখতে যাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, যা মানুষকে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে এগিয়ে নেয়।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমরা সৎকাজ ও আল্লাহভীতিতে একে অপরকে সহযোগিতা করো।” (সূরা মায়িদা: ২)। অসুস্থ ব্যক্তির পাশে দাঁড়ানো, তার কষ্ট লাঘবে চেষ্টা করা, তাকে সান্ত্বনা দেওয়া—all এগুলোই সৎকাজের অন্তর্ভুক্ত। প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) অসংখ্য হাদীসে রোগী দেখার গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন। এক সহীহ হাদীসে তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি সকালে রোগী দেখতে যায়, সন্ধ্যা পর্যন্ত সে জান্নাতের পথে থাকে, আর সন্ধ্যায় গেলে সকালে পর্যন্ত সে জান্নাতের পথে থাকে।” (সহীহ মুসলিম)। অপর এক হাদীসে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন বলবেন, “হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমাকে দেখতে আসোনি…” এ হাদীস দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যায় যে, মুসলমান ভাইয়ের অসুস্থতার খোঁজ নেওয়া আল্লাহর সন্তুষ্টির অন্যতম উপায়।

আমাদের সমাজে আজ অনেক বৃদ্ধ, একাকী মানুষ কিংবা দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তি হাসপাতাল বা ঘরে একাকী কষ্ট ভোগ করছেন। অনেক সময় পরিবারের সদস্যরাও সময়ের অভাবে পাশে থাকতে পারছেন না। এমন অবস্থায় আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী কিংবা বন্ধুদের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো, সময় দেওয়া এবং অন্তত একটি দোয়া করে ফিরে আসা। এটি শুধু মানসিক সান্ত্বনাই নয়, বরং একটি ইবাদত ও সওয়াবের কাজ। ইসলামের এই মানবিক দিকটি সমাজে আরও বেশি করে চর্চা হওয়া প্রয়োজন।

ইসলামী মূল্যবোধসম্পন্ন একটি সমাজ গঠনে এই সুন্নাহগুলোকে জীবিত রাখাই হলো আমাদের দায়িত্ব। ইমাম-খতিবগণ এবং ইসলামি সংগঠনগুলোকে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে, যেন মুসলমানরা আবারও সহানুভূতির চর্চায় ফিরে আসে। রোগী দেখা যেন কেবল আনুষ্ঠানিকতা না হয়ে বরং নেক আমল হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়, সেটিই হওয়া উচিত আমাদের সকলের লক্ষ্য। আসুন, আমরা আবারও এই মহৎ সুন্নাহকে জীবিত করি এবং অসুস্থদের পাশে দাঁড়িয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি।-আমিন