বাকৃবি প্রতিনিধি: আসন্ন ইদুল আযহা উপলক্ষে জমে উঠেছে পশুর হাট আজ শেষ দিনে রাজধানীর পশুর হাটগুলিতে পশুর সংকট দেখা দিয়েছে। ক্রেতারা নিজের পছন্দের গরু কিনতে এক হাট থেকে আরেক হাটে ছুটছেন। তবে বিক্রেতারা উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে গরুর দামে ছাড় দিতে রাজি নন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের ইদে ১০ জাতের গরুর বেচাকেনা হচ্ছে। গরুর জাতগুলো হলো—
১. দেশি গরু
ছোট আকৃতির, গাঢ় বাদামি বা কালো রঙের এই গরুগুলো রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অধিক এবং মাংসের স্বাদেও উৎকৃষ্ট হওয়ায় খামারিদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই গরুর বৈশিষ্ট্যগুলো হলো—গলার চামড়ার ভাঁজ কম, পিঠের কুঁজ কম, শরীরে চর্বি কম এবং শরীরের গড় ওজন প্রায় ২০০-২৫০ কেজি। এ ছাড়া এদের পা ছোট, কান ছোট, এবং মাথা অপেক্ষাকৃত ছোট ও চ্যাপ্টা। পরিবেশের সঙ্গে সহজেই মানিয়ে নিতে পারায় পালনে সুবিধাজনক।
২. পাবনা ক্যাটল
এই জাতের গরুর উৎপত্তি পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে। মাঝারি আকারের এই গরু মাংস ও দুধ উভয় উৎপাদনে উপযোগী। ষাঁড়ের গড় ওজন প্রায় ৩৫০–৪০০ কেজি এবং গাভীর ওজন ২৫০–২৮০ কেজি। গায়ের রঙ সাধারণত লালচে, ধূসর বা মিশ্রবর্ণের হয়। বিশেষ করে ষাঁড়ের গায়ে বিভিন্ন রঙের ছটা ও ধূসর আধিপত্য দেখা যায়। পরিবেশে অভিযোজিত, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা এবং মাংসের স্বাদের জন্য এই জাতও বেশ সমাদৃত।
৩. রেড চিটাগাং ক্যাটল
লাল রঙের এই গরুর উৎপত্তি চট্টগ্রাম অঞ্চলে। সংক্ষেপে একে আরসিসি বলা হয়। দেহের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩০ সেমি এবং উচ্চতা ১২০ সেমি। প্রাপ্তবয়স্ক ষাঁড়ের ওজন প্রায় ২০০–৪০০ কেজি এবং গাভীর ওজন ২০০–২৫০ কেজি। এই গরুর বৈশিষ্ট্যগুলো হলো দেহ লাল, মাথা ছোট ও চ্যাপ্টা, পা ছোট, চামড়া পাতলা এবং ওলান ছোট। গাভী গরু প্রতিদিন গড়ে ৪–৬ লিটার দুধ দেয়। সুস্বাদু মাংস, আকর্ষণীয় গঠন এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য খামারিদের কাছে এই জাতটির চাহিদা অনেক।
৪. ফ্রিজিয়ান ও দেশি সংকর গরু
এই জাতটি ফ্রিজিয়ান ও দেশি জাতের গরুর সংকরায়ণের মাধ্যমে তৈরি। সাধারণত সাদা-কালো রঙের হয়ে থাকে। ওজন প্রায় ৬০০–৭০০ কেজি পর্যন্ত হয়। দ্রুত ওজন বৃদ্ধি, দুধ উৎপাদনে উচ্চক্ষমতা এবং পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজিত হওয়ার ক্ষমতার কারণে এটি খামারিদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
৫. শাহীওয়াল
এই জাতের গরুর উৎপত্তি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে। প্রাপ্তবয়স্ক ষাঁড়ের ওজন প্রায় ৫০০–৫২০ কেজি এবং গাভীর ওজন ২৫০–৪০০ কেজি।
৩০০ দিনে প্রায় ২ হাজার ১৫০ লিটার দুধ উৎপাদনে সক্ষম। বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে শান্ত স্বভাব, পাতলা চামড়া, ছোট পা, ছোট ও পূর্ণ শিং, বৃহৎ গলকম্বল এবং লম্বা লেজ। গাভীর ওলান বড়, প্রশস্ত, নরম ও মেদহীন, আর বাটগুলো লম্বা, মোটা ও সমান আকৃতির হয়।
৬. সিন্ধি গরু
পাকিস্তানের করাচি ও হায়দ্রাবাদ অঞ্চলে এই গরুর আদি বাসস্থান। বর্তমানে ভারত ও বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই পাওয়া যায়। প্রাপ্তবয়স্ক ষাঁড়ের ওজন ৩৮০–৪৫০ কেজি এবং গাভীর ওজন ২৮০–৩৪০ কেজি। গাভী গরু প্রতিদিন গড়ে ৫ কেজি দুধ উৎপাদনে সক্ষম। এদের বৈশিষ্ট্যগুলো হলো গায়ের রঙ গাঢ় লাল বা চকলেট বর্ণের, মাথা ও মুখমণ্ডল ছোট, কপাল চওড়া এবং মাঝখান কিছুটা উঁচু, নাভির চামড়া বড় ও ঝুলন্ত এবং গলকম্বল বৃহৎ ও ভাঁজযুক্ত।
৭. হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান
এই জাতের গরুর উৎপত্তি নেদারল্যান্ড ও জার্মানিতে। সাধারণত সাদা-কালো ধারা কাটা গায়ে হয়। গড় উচ্চতা প্রায় ১৪৫–১৬৫ সেমি এবং ওজন ৬৮০–৭৭০ কেজি। মাংস ও দুধ উৎপাদনে সমানভাবে বিখ্যাত। ৩০০ দিনে প্রায় ৯ হাজার থেকে ১২ হাজার কেজি পর্যন্ত দুধ দিতে পারে। বর্তমানে এই জাতের গরু পালনে খামারিদের আগ্রহ বাড়ছে।
৮. ব্রাহমা
আমেরিকার ব্রাহমা ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন প্রথম এই জাত উদ্ভাবন করে। এটি মূলত মাংস উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। প্রাপ্তবয়স্ক ষাঁড়ের ওজন ৭০০–১,০০০ কেজি এবং গাভীর ওজন ৪৫০–৬০০ কেজি। বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে পিঠে বড় কুঁজ, বড় পা, লম্বা মাথা, শিং নেই, গলকম্বল বড়, চামড়া নরম ও শিথিল, স্বভাব শান্ত এবং তাপ সহনশীল। এদের গায়ের রঙ হালকা ধূসর থেকে লাল বা কালো পর্যন্ত হতে পারে। পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গে রঙে কিছু পরিবর্তনও দেখা যায়।
৯. মিরকাদিম গরু
মুন্সিগঞ্জ জেলার মিরকাদিম উপজেলায় এই গরুর উৎপত্তি। অনেকের কাছে এটি “সাদা” বা “ধবল গরু” নামেও পরিচিত। এই গরুর বৈশিষ্ট্য হলো গায়ের রঙ সম্পূর্ণ সাদা, উচ্চতা গড়ে ৩ থেকে ৫ ফুট, শিং, চোখের পাতা ও মুখের কিছু অংশ লালচে বা গোলাপি বর্ণের। গড় ওজন ৩০০–৪০০ কেজি। দেখতেও সুন্দর এবং মাংস সুস্বাদু হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।
১০. সংকর জাতের গরু
এই গরুগুলো বিভিন্ন জাতের গরুর মধ্যে ক্রস ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে উৎপাদিত। যেমন—ফ্রিজিয়ান ও দেশি, শাহীওয়াল ও দেশি, ব্রাহমান ও দেশি ইত্যাদি।
দ্রুত মাংস উৎপাদন এবং পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজনক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। সংকর জাতের গরুতে শরীরের রঙ ও বৈশিষ্ট্যে বৈচিত্র্য দেখা যায়।
গরুর জনপ্রিয়তার বিষয়ে বিক্রেতারা আমাদের সময়কে জানান, ক্রেতাদের আর্থিক অবস্থা এবং নিজেদের পছন্দের উপর গরুর জাত নির্ভর করছে। যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো তারা বড় আকারের গরু ব্রাহমা, শাহীওয়াল এবং হেলস্টেইন ফ্রিজিয়ান গরু কিনছে। অন্যরা দেশি গরু এবং রেড টিটাগং ক্যাটল কিনছেন।