বাকৃবি প্রতিনিধি:‘কোরবুন’ শব্দ থেকে ‘কোরবানি’ শব্দের উৎপত্তি। যার অর্থ ত্যাগ বা উৎসর্গ। আল্লাহ তাআলার একত্ববাদে বিশ্বাস ও নৈকট্য লাভের আশায় মুসলমানরা প্রতিবছর ১০ জিলহজ মাসে পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। এর মাধ্যমে তারা লোভ-লালসার প্রতীকী বিসর্জন দেন ।
আমাদের দেশে অধিকাংশ কোরবানিতেই গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া জবাই করা হয়। এর মাধ্যমে গরিব ও দুস্থ মানুষের আমিষের চাহিদা মেটানো হলেও, যদি কোরবানির পশুর বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা না করা হয়, তবে তা থেকে নানা সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।
এই বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোছাঃ মিনারা খাতুন জানান—
১. পশুর বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা না করলে তা পানির উৎসে মিশে পানি দূষিত করতে পারে। এর ফলে কলেরা, টাইফয়েড, ডায়রিয়া এবং আমাশয়সহ পানিবাহিত নানা রোগ দেখা দিতে পারে।
২. দেহের কোনো অংশে কাটা-ছেঁড়া বা ক্ষত থাকলে, কাঁচা রক্ত, মাংস বা অভ্যন্তরীণ অঙ্গ স্পর্শের মাধ্যমে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এর ফলে ব্রুসেলোসিস এবং অ্যানথ্রাক্স রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৩. কোরবানির বর্জ্য মাছি ও অন্যান্য পোকামাকড়ের প্রিয় খাদ্য। অব্যবস্থাপনার কারণে এসব জায়গায় বংশবিস্তার জায়গায় পরিণত হবে । এর মাধ্যমে টাইফয়েড ও সালমোনেলোসিস রোগ ছড়াতে পারে।
৪. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে বৃষ্টির পানি জমে থাকবে, যা মশার প্রজনন ক্ষেত্র হয়ে ওঠে। এর ফলে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।
৫. এই বর্জ্যের কারণে পরিবেশের বাতাস দূষিত হয় এবং ব্যাকটেরিয়ার ঘনত্ব বাড়ে, যা বসবাসের অযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। বাতাসে ভেসে জীবাণু মানুষের দেহে প্রবেশ করে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, অ্যালার্জি ও অ্যাজমা সৃষ্টি করতে পারে।
৬. কুকুর ও বিড়াল যদি কোরবানির বর্জ্য ভক্ষণ করে, তবে তাদের দেহে টক্সোপ্লাজমা ও ব্রুসেলা নামক জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। এর ফলে টক্সোপ্লাজমোসিস ও ব্রুসেলোসিস রোগ হতে পারে। এছাড়াও তাদের মাধ্যমে পরিবেশে জীবাণুর বিস্তার ঘটতে পারে।
৭. স্ক্যাবিস এবং চর্মরোগে আক্রান্ত গবাদিপশুর ত্বকের সংস্পর্শে যেকোন ব্যক্তির মধ্যে ওই রোগে সংক্রামিত হতে পারে।
প্রতিরোধে করণীয় সর্ম্পকে তিনি আরও জানান,
১. অ্যানথ্রাক্স এবং ব্রুসেলা রোগে আক্রান্ত গবাদি ক্রয় করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
২. মাংস কাটা এবং প্রক্রিয়াজাত করার সময় গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে।
৩. নির্দিষ্ট জায়গায় কোরবানি দিতে হবে এবং বর্জ্য ভালোভাবে ব্যাগে ভরে নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে অথবা আবাসস্থল থেকে দূরে পুতে রাখতে হবে।
৪. কোরবানীর স্থান জীবাণুনাশক ছিটাতে হবে এবং পানির উৎস দূষণমুক্ত রাখাতে হবে।
৫. মশা নিধন কর্মসূচি জোরদার করতে হবে।
৬. সিটি কর্পোরেশনের নিয়মাবলী অনুসরণ করতে হবে।