সমীরণ বিশ্বাস: দেশে যে পরিমাণ প্লাস্টিক পণ্য তৈরি হয়, তার চেয়ে বেশি ভেসে আসে বহির্বিশ্ব থেকে। ফলে বাড়ছে প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা। অন্ত দেশীয় এ সমস্যা সমাধান করা যাচ্ছে না। আর এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নাই প্রয়োজনীয় সক্ষমতা। দ্রুতই এর লাগাম টেনে ধরার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
দেশে বাড়ছে প্লাস্টিক দূষণ : আধুনিক সভ্যতায় প্লাস্টিক এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নাই। হাত বাড়ালেই আর কিছু মিলুক না মিলুক, প্লাস্টিক পণ্য মেলে। বিশেষ করে যেসব দেশে প্লাস্টিকের যথেচ্ছা ব্যবহার কমানো যায়নি, সে সব দেশের অবস্থা শোচনীয়। ঢাকা মহানগরে প্রতিদিন প্লাস্টিক বর্জ্য হয় ৮০০ থেকে ১০০০ মেট্রিক টন। আর বছরে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহৃত হয় ৩১৫ কোটি থেকে ৩৮৪ কোটি। এর সামান্য অংশই পুন: প্রক্রিয়াজাত করা হয়।
মন্তব্য : আমরা যদি এই একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক উৎপাদন বন্ধ করতে পারি, তা হলে আমাদের ওয়েস্টেজ জেনারেশন ৭০% কমে যাবে। তখন কিন্তু বাকি ৩০ % আমাদের ব্যবস্থাপনার মধ্যে থাকবে। আমাদের যে ক্যাপাসিটি, ক্যাপাবিলিটি এবং ফিনান্সিয়াল রিসোর্স এ সকল দিক চিন্তা করলে, সবদিক থেকে এটা সহজ বাংলাদেশর ব্যবস্থাপনা করতে । কিন্তু বর্তমান অবস্থায় এটা ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় প্লাস্টিক যে পরিবেশে যোগ হচ্ছে, তা ম্যানেজ করার ক্যাপাসিটি আমাদের নাই। এগুলি ব্যবস্থাপনার জন্য যে টেকনোলজি দরকার তারও সুযোগ নাই। যে অর্থ দরকার তাহাও নাই।
মানবদেহ ও পরিবেশের উপর প্লাস্টিকের প্রভাব : প্লাস্টিক পণ্য তৈরির সময় পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। প্লাস্টিক পণ্য বিপনন পর্যায়ে দূষণ হচ্ছে। একইভাবে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের সময় দূষণ হচ্ছে। পরবর্তীতে প্লাস্টিক যখন ব্যবহারের পরে ফেলে দিচ্ছি তখনও দূষণ হচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিদিন দেশে ১.৫ বিলিয়ন প্লাস্টিক পণ্য তৈরি হয়। এর সাথে যুক্ত হয় ২৭ লক্ষ মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য যাহা নদ নদী থেকে ভেসে আসে বহির্বিশ্ব থেকে। বর্তমানে অন্ত:দেশীয় প্লাস্টিক দূষণ দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর প্রায় বিশ্বে ৪০ কোটিরও বেশি টন প্লাস্টিক উৎপাদিত হয়, যার বড় একটি অংশ পরিবেশে গিয়ে পড়ে। এটি সমুদ্র, নদী, প্রাণী এবং মানবস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি তৈরি করে। প্লাস্টিক দূষণ বিশ্বব্যাপী একটি সীমানাহীন সমস্যা, তাই এর জন্য আন্তর্জাতিক সমাধান প্রয়োজন।
আন্তর্জাতিক কর্মসূচি: প্লাস্টিক দূষণ কমানোর জন্য একটি টিটি (TT) হতে যাচ্ছে জাতিসংঘের কর্মসূচির আওতায়। "প্লাস্টিক কমাতে টিটি চুক্তি" বলতে বোঝানো হচ্ছে “Legally Binding Instrument to End Plastic Pollution” অথবা সংক্ষেপে বলা হয় “UN Global Plastics Treaty”। এটিকে অনেক সময় "টিটি চুক্তি" বলে উল্লেখ করা হয়, যা "Treaty" শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ হিসেবে ব্যবহার কার হয়। চুক্তির মূল লক্ষ্য হলো ; ২০৪০ সালের মধ্যে প্লাস্টিক দূষণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা। প্লাস্টিক উৎপাদন, ব্যবহার এবং পুনর্ব্যবহার–এই তিন ধাপে নিয়ন্ত্রণ আনা। প্লাস্টিকের জীবনচক্রের প্রতিটি ধাপে বৈশ্বিক সমন্বয় গঠন করা। লক্ষ্য হলো ২০২৫ সালের মধ্যে চুক্তিটি চূড়ান্ত করা। আন্তর্জাতিক চুক্তি ছাড়া প্লাস্টিক দূষণ রোধ করা অসম্ভব বলে মনে করেন পরিবেশবিদগণ।
লেখক: সমীরণ বিশ্বাস, কৃষি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ , ঢাকা।