মোঃ আব্দুল আলিমঃ পদ্মা নদীর বাঁধ রক্ষা ও মোহনা পার্ক সংলগ্ন অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে চর-আলাতুলি, দেবিনগর ও শাহজাহানপুর ইউনিয়নের সাধারণ জনগণ ১৬ অক্টোবর বুধবার সকাল ১১.০০ মিনিটে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
মানববন্ধন শেষে বালুমহাল ইজারা বাতিল ও অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে ফসলি জমি ও বসত-ভিটা রক্ষার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির পর এক প্রতিবাদী মিছিল নিয়ে কোর্ট চত্ত¡র হয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। মানববন্ধন কর্মসূচিতে জনাব নবীর আলীর সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জনাব মো: মোখলেসুর রহমান, আফসারুল আলম, মাওলানা কাওসার আলী, ফয়সাল হোসেন, আব্দুল জলিল প্রমুখ।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, প্রভাবশালী মহল শাহজাহানপুর ইউনিয়নের মোহনা পার্ক সংলগ্ন দুর্লভপুর-হাকিমপুর এলাকায় পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে প্রতিদিন ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। এতে নদীর স্বাভবিক গতি বিঘ্নিত হয়ে তীর ও বাঁধ ভেঙে কয়েক হাজার বিঘা ফসলী জমি, স্থাপনা, বসতবাড়ী ও প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। চর-আলাতুলি, দেবিনগর ও শাহজাহানপুর ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী কয়েকশ বাড়িঘর এখনও হুমকির মধ্যে রয়েছে।
এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জের অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র মোহনা পার্কও চরম হুমকির মধ্যে রয়েছে। বক্তারা আরো বলেন- সরকার কর্তৃক প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এ বালু উত্তোলন সংক্রান্ত বিধানের ৫(২) এ বালু উত্তোলনের যেসকল নীতিমালা রয়েছে তার কোনটাই না মেনে অবৈধধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা চর-আলাতুলি, দেবিনগর ও শাহজাহানপুর ইউনিয়নকে নদী ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য অবিলম্বে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি করেন।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে পদ্মা নদীর ভাঙনে ভুক্তভোগী অংশগ্রহণকারী কৃষক-শ্রমিক, পেশাজীবী, ছাত্র জনতা বালুমহাল বন্ধের দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে। শ্লোগানে তাঁরা বলেন- অবৈধ বালু উত্তোলন, মানি না মানব না, স্বৈরাচারের দালালেরা-হুশিয়ার সাবধান, পালিয়ে গেছে হাসিনা-বালু উত্তোলন মানি না, প্রশাসন যেওনা ভুলি-রক্ষা করি আলাতুলি, বালুমহাল বাতিল চাই-বাতিল করো করতে হবে, বালু উত্তোলনে জড়িতদের-শাস্তি চাই দিতে হবে, ভেঙে যাওয়া বাঁধের-সংস্কার চাই করতে হবে।
মানবন্ধন শেষে চর-আলাতুলি, দেবিনগর ও শাহজাহানপুর ইউনিয়নের সাধারণ জনগণের পক্ষে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। এতে তারা বলেন- ৫ আগস্ট দেশে ছাত্রজনতার বিপ্লবের মাধ্যমে স্বৈরাচার-ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছরের ক্ষমতার অবসান ঘটে। শেখ হাসিনা ও তার পেটোয়া বাহিনী ক্ষমতা ও অর্থের লোভে দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। ক্ষমতার অপব্যবহার ও পেশি শক্তির বলে সৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকার দেশের অন্যান্য জায়গার মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জেও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তারই অংশ হিসেবে তারা পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করেছে। এতে তীর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে শাহজাহানপুর, দেবিনগর ও চর আলাতুলি ইউনিয়নের পদ্মা নদীর তীরবর্তী মানুষ হুমকির মধ্যে পড়ে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রানীনগর, হাকিমপুর ও দুর্লভপুর এলাকায় পদ্মা নদী থেকে বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। এতে ভাঙছে পদ্মা নদীর তীর, বিলীন হচ্ছে জনপদ, রক্ষা পায়নি তীর রক্ষা বাঁধও। ইজারা সীমার বাহিরে কয়েক বছর থেকে ক্ষমতার দাপটে শাহজাহানপুর ইউনিয়নের মোহনা পার্ক সংলগ্ন নদীর তীর ঘেষে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছিলো এবং পার্শ্ববর্তী হাকিমপুর বিওপি ক্যাম্পে অভিযোগ জানালেও তারা সহযোগিতা না করে উল্টো আমাদেরই হুমকি দেন। কিন্তু সম্প্রতি ২০২৪ এ ছাত্রজনতার বিপ্লবের পর মূল মালিক পলাতক। বর্তমানে শাহজাহানপুর ইউনিয়নের কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রশাসনের আইন অমান্য ও স্থানীয় সাধারণ জনগণের বাধা উপেক্ষা করে প্রভাব খাটিয়ে আওয়ামীলীগ নেতা, সাবেক চেয়ারম্যান ও অন্যান্য নেতাদের যোগসাজসে অবৈধভাবে নদীর কোল ঘেষে বালু উত্তোলন করছে। এরই মধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে চর-আলাতুলি, দেবিনগর ও শাহজাহানপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার বিঘা ফসলী জমি, স্থাপনা, বসতবাড়ী ও প্রতিষ্ঠান। এখনও হুমকির মধ্যে রয়েছে কয়েকশ বাড়িঘর। এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জের অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র মোহনা পার্কও চরম হুমকির মধ্যে রয়েছে।
স্বৈরাচারের মদদপুষ্ট বালুমহাল ইজারা গ্রহণকারী মূল মালিক পলাতক হওয়ায় শাহজাহানপুর ইউনিয়নের প্রভাশালী কয়েকটি গ্রুপ নতুন করে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আবার বালু উত্তোলন শুরু করেছে। স্থানীয় জনগন বাধা দিলে তারা প্রাণ নাশের হুমকি দিয়েছে। শাহজাহানপুর ইউনিয়নের নরেন্দ্রপুর, হরিশপুর ও হুররো পাড়ায় ভুক্তভোগী দুর্লভপুর-রানীনগর গ্রামের বাসিন্দাদের কয়েকবার আটকে রেখে হুমকি দিয়েছে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন ও থানায় অভিযোগ করলে এবং গ্রামবাসীর তীব্র বাধায় কয়েকদিন বালু উত্তোলন বন্ধ থাকলেও পরবর্তীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী থেকে সন্ত্রাসী এনে আবার অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করে। গত ১২ অক্টোবর অস্ত্রসহ মোহনা পার্কে সন্ত্রাসীরা আসলে জনগণের বাধার মুখে পালাতে বাধ্য হয়। এখনও তারা বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দিচ্ছে এবং যেকোন মূল্যে অবৈধভাবে বালু তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
পদ্মা তীরবর্তী চর-আলাতুলি, দেবিনগর ও শাহজাহানপুর ইউনিয়নের ভুক্তভোগী অসহায় নাগরিকরা জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপিতে নিম্নোক্ত দাবি উত্থাপন করেন-
১. অবিলম্বে বালুমহাল বাতিল করতে হবে;
২. অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে;
৩. অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতি পূরণ দিতে হবে;
৪. হয়রানি ও হুমকিদাতাদের তদন্ত করে আইনের আওতায় নিতে হবে;
৫. ভবিষ্যতে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে;
৬. ভুক্তভোগীদের সর্বত্র সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
মানববন্ধন শেষে স্মারকলিপি প্রদান করলে জেলা প্রশাসক অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ^স্ত করেন। জেলা প্রশাসক বলেন সরেজমিনে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন। যেকোন মূল্যে ফসলী জমি, বাঁধ ও নদীর তীর রক্ষা করা হবে। প্রয়োজনের পদ্মা নদীতে বালুমহাল ইজারা বাতিল করা হবে।