এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: প্রকৃত মৎস্যচাষীদের স্বার্থে হাওরে ইজারা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, কোন হাওরে ইজারা থাকা উচিৎ নয়। হাওর ঐ অঞ্চলের মানুষের অধিকার; আর তা রক্ষা করতে হবে।
আজ সকালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে "সরকারি জলমহাল ব্যবস্হাপনা নীতি ২০০৯: হাওর অঞ্চলে বৈষম্য ও অব্যবস্হাপনা"- শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
হাওরের মালিক মূলত কে প্রশ্ন রেখে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, আসলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে হাওরগুলো রয়েছে। যদিও অধিকাংশ হাওর এলাকা ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে দিয়ে দেওয়া হয়েছে; যারা শুধু ইজারা দিয়ে এখান থেকে রাজস্ব আহরণ করে। তিনি আরো বলেন, হাওরকে ঘিরে একটা বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা হয়েছে। হাওর অঞ্চলের ২৯ শতাংশ মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে।
উপদেষ্টা বলেন, কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে যে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে, তাকে বলা হচ্ছে অল ওয়েদার সড়ক। পরে জানা যায় যে, সব ঋতুতেই এই সড়ক সহনশীল। অথচ এই রাস্তা তৈরির মাধ্যমে এরইমধ্যে ঐ এলাকার নিদারুণ ক্ষতি হয়ে গেছে।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, মাছ ধরার জন্য এরইমধ্যে আমরা কারেন্ট জাল বন্ধ করেছি। কিন্তু বর্তমানে চায়নাদুয়ারী নামক জালে মাছ ধরা হচ্ছে। এগুলো অবশ্যই বন্ধ করা হবে। জাল হবে মৎস্যজীবীদের একটা উপকরণ অথচ এই জাল হয়ে গেছে এক অবৈধ জাল। প্রকৃত জেলেরা এসব অবৈধ জাল ব্যবহার করে না। কিছু মৌসুমী মৎস্যজীবীরা এসব জাল ব্যবহার করা থাকে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উপদেষ্টা হাওর রক্ষার পদক্ষেপ হিসেবে বিভিন্ন এলাকাকে অভয়াশ্রম ঘোষণার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, এর ফলে বিলুপ্ত হওয়া মাছগুলো ফিরে আসতে পারে। সুতরাং জৈবিক ব্যবস্থাপনা হবে হাওর রক্ষার একটা মূল পদক্ষেপ।
হাওরে অঞ্চলের ভুক্তভোগীরা বলেন, হাওরের বিল ইজারা প্রায় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও প্রভাবশালী মহাজনদের হাতেই যায়; যার ফলে সাধারণ মৎস্যজীবীরা বঞ্চিত হয়। মৎস্যজীবী সমিতির নামে হাওর ইজারা নেওয়ার ক্ষেত্রেও নেপথ্যে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তাদের সমর্থকরা হাওর লিজ নিয়ে থাকে। তাই হাওর বিল লিজ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রকৃত সাধারণ মৎস্যজীবী বা মৎস্যচাষীরা পেতে পারেন তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)-এর আহ্বায়ক রাশেদা কে. চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, সাবেক সচিব ও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার। এতে আরো বক্তৃতা করেন বারসিকের পরিচালক পাভেল পার্থ, হাওর সংস্কৃতি অধ্যয়ন এবং গবেষণা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সজল কান্তি সরকার, মানবাধিকার কর্মী জাকিয়া শিশির, হাওর উন্নয়ন আন্দোলনের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ-এর নির্বাহী পরিচালক ড. এম মোখলেসুর রহমান। এসময় হাওর অঞ্চলের ভুক্তভোগী আহ্লাদ খান, অঞ্জনা বিশ্বাস, বোরহান উদ্দিন প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর সদস্য সচিব শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় হাওর অঞ্চলে বৈষম্য ও অব্যবস্হাপনা বিষয়ে উপস্থাপনা করেন অ্যাসোসিয়েটস ফর ইনোভেটিভ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এআইআরডি)-এর পরিচালক আব্দুল হাই চৌধুরী।