বাকৃবি প্রতিনিধি: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) শর্করা ও প্রাণিজ আমিষের সাশ্রয়ী বিকল্প সবজি শিমুল আলু ও অড়হর ডাল দিয়ে বিভিন্ন পুষ্টিকর খাদ্য তৈরির প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) কৃষি অনুষদের এক কক্ষে ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকিরের নেতৃত্বে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৫ জন উদ্যোক্তা ও ৫ জন কৃষকসহ মোট ১০ জন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন, বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. শাহানারা বেগমসহ প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
স্বল্পমূল্যে পুষ্টিকর খাদ্য তৈরির নতুন দিগন্ত
প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে অধ্যাপক ছোলায়মানের সহধর্মিণী রাকেয়া তৌফিকা নাজনীন রিন্ত মুখরোচক খাবার তৈরি করে উপস্থিতদের পরিবেশন করেন। পরে উদ্যোক্তা ও কৃষকদের এসব খাবার তৈরির কৌশল শেখানো হয়।
অধ্যাপক ছোলায়মান বলেন, "অড়হর ও শিমুল আলু শর্করা ও প্রাণিজ আমিষের সহজলভ্য বিকল্প হতে পারে। সেই লক্ষ্যেই আজকের এই প্রয়াস।" তিনি জানান, শিমুল আলু ও অড়হর দিয়ে সিঙ্গারা, পুরি, রুটি, চিপসসহ নানা ধরনের খাবার তৈরি করা হয়েছে। এমনকি শিমুল আলু দিয়ে মাংসও রান্না করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, আফ্রিকায় জনপ্রিয় অড়হরের রুটি বাংলাদেশেও জনপ্রিয় করা সম্ভব।
জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজনযোগ্য ফসল
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এই দুই ফসলের সম্ভাবনা নিয়ে অধ্যাপক ছোলায়মান বলেন, "শিমুল আলু ও অড়হর খরা সহনশীল এবং স্টার্চ ও প্রাণিজ আমিষের সুলভ উৎস হিসেবে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এদের প্রচুর বায়োমাস (৩-৫ টন প্রতি হেক্টর) উৎপাদিত হয়, যা জ্বালানির বিকল্প হতে পারে। বেড়া ও সাথি ফসল হিসেবেও এগুলো কার্যকর।"
তিনি আরও বলেন, "ধান উৎপাদনের খরচ বাড়ছে। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের অপ্রচলিত খাদ্যের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। আমরা প্রায় ২০ টন পর্যন্ত শিমুল আলু উৎপাদন করেছি।"
অড়হরের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "বাজারে প্রাণিজ আমিষের দাম বেশি, অথচ অড়হর সহজলভ্য ও পুষ্টিকর। এতে প্রচুর ফাইবার রয়েছে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর এবং ওজন কমাতেও সাহায্য করে।"
উদ্যোক্তা ও কৃষকদের অভিমত
ময়মনসিংহ সদরের কৃষি কর্মকর্তা ও উদ্যোক্তা মো. জিয়াউর রহমান বলেন, "মটরশুঁটির দিকে ঝোঁকার পরিবর্তে প্রতিটি বাড়িতে অন্তত একটি অড়হরের গাছ থাকলে ৭-৮ মাসের জন্য ডালের চাহিদা মেটানো সম্ভব। এর পাতা জৈব সার ও প্রাণী খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। অধ্যাপক ছোলায়মান স্যার আমাদের এসব খাবার তৈরি ও রান্নার কৌশল শিখিয়েছেন, যা খুবই কার্যকর।"
কৃষক শফিউল হক বলেন, "অড়হর দিয়ে তৈরি খাবার আমার খুব ভালো লেগেছে। বাসায় এগুলো আমরাও তৈরি করবো। আর শিমুল আলু সম্পর্কে আজই প্রথম জানলাম।"