মোঃ মোহাইমিনুল ইসলাম: লটকন বাংলাদেশের প্রচলিত একটি টক-মিষ্টি স্বাদের ফল। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি ও ভিটামিন বি-২ রয়েছে। ফলটি বাংলাদেশে লটকন ছাড়াও হাড়ফাটা, বুগি, ভুবি, বুবি, লটকাউ, কিছুয়ান ইত্যাদি নামে পরিচিত। পূর্বে এর তেমন একটা প্রচলন না থাকলেও বর্তমানে এটি বেশ প্রচলিত ও জনপ্রিয় একটি ফল এবং এর উৎপাদন এখন চোখে পড়ার মত। নরসিংদী জেলায় এটি ব্যাপকভাবে চাষাবাদ করা হয় এছাড়াও ময়মনসিংহ, সিলেট, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাজীপুর ও টাঙ্গাইল জেলায় এটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ছাড়াও লটকন ভারত, থাইল্যান্ড ও মালেয়শিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়।
লটকন চাষের জন্য আংশিক ছায়াযুক্ত উঁচু থেকে মাঝারি উঁচু বেলে দো-আঁশ জমি উপযুক্ত তবে অবশ্যই সেচের সুব্যবস্থা থাকতে হবে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাস চারা রোপন করার উপযুক্ত সময়, তবে ভাদ্র-আশ্বিন মাসেও অর্থাৎ বর্ষার শেষ দিকে চারা লাগানো যায়। রোপনের সময় চারা থেকে চারা এবং সারি থেকে সারি উভয়ের দূরত্বই ৬ মিটার রাখা ভালো। রোপনের জন্য আগে অবশ্যই গর্ত করে নিতে হবে। গর্তের আকার ৯০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার হতে হয়। গর্ত করার ১২-১৫ দিন পর গর্তের মাটির সাথে ২০ কেজি গোবর বা জৈব সার, ৫০০-৬০০ গ্রাম টিএসপি ও ২৫০-৩০০ গ্রাম এমওপি সার ভালোভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে মাটি শুকনা থাকলে মাটি ভিজিয়ে দেয়া ভালো।
ভরাট করার ১০ থেকে ১২ দিন পর গর্তের মাঝখানে সুস্থ-সবল চারা রোপন করতে হবে। এক থেকে দুই দিন পর পর সেচ দিতে হয়। প্রয়োজন বোধে খুঁটি ও বেড়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। একেকটি পূর্ণ বয়স্ক গাছের জন্য ১৫-১৮ কেজি গোবর বা জৈব সার, ১ কেজি ইউরিয়া, ০.৬ কেজি টিএসপি ও ০.৫ কেজি এমওপি সার ব্যবহার করতে হবে। তবে মিশ্র সারও ব্যবহার করা যায়। গাছের গোড়া থেকে এক মিটার দূরত্বে গোল করে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে উল্লেখিত সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। গাছের মরা ও রোগাক্রান্ত ডাল ছাঁটাই করে দিতে হবে। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে সাধারণত শীতের শেষের দিকে গাছে ফুল আসে এবং জুলাই-আগস্ট মাসের দিকে ফল সংগ্রহ করা যায়। একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ হতে ৫ হতে ১০ মন পর্যন্ত লটকন পাওয়া যায়।
ভিটামিনের পাশাপাশি লটকনে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহসহ বিভিন্ন খনিজ উপাদান রয়েছে। লটকনে থাকা অ্যামাইনো এসিড ও এনজাইম দেহ গঠন ও কোষের ক্ষয় পূরণে সাহায্য করে। এছাড়াও লটকন বমি-বমি ভাব এবং অবসাদ দূর করতে সক্ষম। বর্তমানে দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে লটকন রপ্তানি করা হচ্ছে। কৃষকদের বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষে উৎসাহিত করা গেলে, মধ্যম প্রচলিত এই ফল দেশের পুষ্টি চাহিদা যোগানের পাশাপাশি অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
লেখক: বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), বাকৃবি চত্বর, ময়মনসিংহ-২২০২,