৩য় দিনের মত সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি-শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত

সিকৃবি প্রতিনিধি: সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’কে বৈষম্যমূলক দাবি করে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তারা প্রচলিত সরকারি পেনশনে থাকার দাবিতে সোমবার (১ জুলাই) থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছেন । এই কর্মবিরতির কারণে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সহ ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, পরীক্ষা, প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কাজ অচল হয়ে পড়েছে।

০৩ জুলাই বুধবার কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সামনে অনুষ্ঠিত কর্মবিরতি পালন অনুষ্ঠানে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. মুহাম্মদ আল মামুনের সঞ্চালনায় এবং সভাপতি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ছফি উল্লাহ ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। এদিকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালার প্রজ্ঞাপন হতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের অন্তর্ভুক্তি অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবিতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার পরিষদের উদ্যোগে প্রশাসনিক ভবনের সামনে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

অফিসার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. আফরাদুল ইসলামের সঞ্চালনায় এবং সভাপতি মোহাম্মদ ছায়াদ মিয়ার সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে অফিসার নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী পরিষদের উদ্যোগে সাধারণ সম্পাদক মোঃ আসাদুজ্জামান এর সঞ্চালনায় এবং সভাপতি মোঃ শরীফ হোসেন ভূইয়ার সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সম্মুখে কর্মবিরতি ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এসময় বক্তারা বলেন রাতের আঁধারে একটি কুচক্রী মহল এবং সচিবরা বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে। তারা বলেন প্রত্যয় স্কিমের ফলে বেতন-বোনাস, উৎসব ভাতা কিছুই থাকবেনা। আর ৩০/৪০ বছর পরে যে পেনশনের সুবিধা দেখানো হচ্ছে সেটা আমরা প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকা করে কোনো বীমায় রাখলেও পাব তাহলে এই প্রত্যয়স্কিমের যৌক্তিকতা কি আমরা বুঝিনা। আমাদের কথা একটাই আমরা এটা মানি না, মানবো না এবং কোনভাবেই মানতে পারিনা। অবিলম্বে এই বৈষম্যমূলক নীতি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।আমাদের আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে নয়, আমাদের আন্দোলন তাদের বিরুদ্ধে যারা আমাদেরকে এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে। কিন্তু এটা আমাদের অস্তিত্ব এবং মর্যাদার লড়াই, এত বৈষম্য মানা যায় না। যতদিন আমাদের এ দাবি আদায় না হবে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ছফি উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, আগামী প্রজন্মের সুরক্ষার জন্য এই আন্দোলন। অকস্মাৎ কেন একটি বৈষম্যমূলক কর্মসূচি শিক্ষকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলো, সেই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকসমাজ কখনোই এটি গ্রহণ করবে না। এই আন্দোলন আমাদের উত্তরসূরি নতুন প্রজন্মের জন্য।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের হয়তো সাময়িক সমস্যা হচ্ছে কিন্তু এই আন্দোলন আপনাদের জন্যও। আপনারাও একসময় শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী হিসেবে যোগ দেবেন। আপনাদের ভবিষ্যতের সুবিধার জন্য আমরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। জুলাই ১ তারিখের পর যারা শিক্ষক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করবে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে নিরুৎসাহিত হবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে গবেষণা। সুতরাং এটা ব্যহত হলে পুরো দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার করে আগামী বছর সেবক নামে যে স্কিম হচ্ছে, সেখানে সবার জন্য যে সুযোগ-সুবিধা হবে, আমরা সেখানে যাব। কোনো অসুবিধা তো নেই। দেশের স্বার্থে সবার জন্য যা হবে, আমাদের জন্যও তা হবে।

অফিসার পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ ছায়াদ মিয়া বলেন, আমাদেরকে আজ রাস্তায় নামিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। বাসের ড্রাইভার কিংবা চা শ্রমিক আন্দোলন করলে সরকার সমঝোতায় আসে কিন্তু লজ্জার সাথে বলতে হয় গত দীর্ঘসময় ধরে বিশ^বিদ্যালয়ের সদস্যরা আন্দোলন করে আসলেও এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ নূন্যতম সম্মানটুকু দিচ্ছে না। এদিকে সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ধরনের ক্লাস, পরীক্ষা কিংবা দাফতরিক কার্যক্রম চালু ছিল না। ফলে একপ্রকার অচল হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষা কার্যক্রম।

এদিকে সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা
প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার করে আগামী বছর সরকারি কর্মচারীদের জন্য ‘সেবক’ নামে যে স্কিমের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তাতে যেতে কোনো অসুবিধা নেই।