বাংলাদেশ হেরিটেজ এথনিক সোসাইটি অফ আলবার্টার গণহত্যা ও স্বাধীনতা দিবস উদযাপন

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: বাংলাদেশ হেরিটেজ এন্ড এথনিক সোসাইটি অব আলবার্টা আজ মঙ্গলবার রাতে ৭১-এর ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে পরিকল্পিত ভাবে বুদ্ধিজীবী ও বাঙালি নিধনের স্মৃতিচারণ ও মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করেছে।

সম্মানিত অতিথি ছিলেন প্রবাসী লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক, বাংলাদেশ নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি, বাংলাদেশ হেরিটেজ এন্ড এথনিক সোসাইটি অব আলবার্টার প্রধান উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার জাহিদ।

প্রধান আলোচক ছিলেন শহীদ বুদ্ধিজীবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি স্কুলের প্রিন্সিপাল মোঃ সাদিকের জ্যেষ্ঠ সন্তান বাংলাদেশ পল্লীউন্নয়ন একাডেমির সাবেক পরিচালক ও সমাজতত্ববিদ ড. কামরুল হাসান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন লেখক, গবেষক অধ্যাপক ড. আনোয়ার জাহিদ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ হেরিটেজ অ্যান্ড এথনিক সোসাইটি অব আলবার্টার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইফুর হাসান এবং তার পক্ষে সভা পরিচালনা সহ সূচনা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের অন্যতম নির্বাহী কর্ম্মকর্তা কবি অনীকা স্বাতীপ্রভা।

আলোচনায় অংশ নেন বার্ডের সাবেক পরিচালক ও ৪ঠা জুলাই ১৯৭১ ভৈরব বাজারে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নুরু আতিকের আত্মীয়া, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের পুত্রবধূ নারীনেত্রী নাসিমা আক্তার। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কার্য্য নির্বাহী রায়হানা রাসমিন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার জাহিদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ভোররাতে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন এবং সর্বশক্তি দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিহত করার ও নির্দেশ দিয়েছিলেন। চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন । সে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা এবং আমাদের সকল সহযোদ্ধাদের প্রতি রক্তাক্ত সালাম। তিনি আরো বলেন ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের সেই নির্মম রাতে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ মানব ইতিহাসের অন্যতম ভয়ঙ্কর গণহত্যার শিকার হয়ে ছিল। হয়ে ছিল ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী এবং তৎকালীন ইপিআর সদস্যসহ অগণিত মানুষ নিপীড়ন ও সহিংসতার নির্মম নিষ্ঠূর আক্রমণের লক্ষ্য। এটি একটি নিরপরাধ জনগোষ্ঠীর রক্তে রাঙানো রাত ছিল, একটি রাত, যা চিরকালের জন্য আমাদের দেশের ভাগ্যের গতিপথকে পরিবর্তন করে দিয়েছিল।

ড. কামরুল হাসান তার হৃদয়স্পর্শী বর্ণনায় প্রিন্সিপাল মোঃ সাদেক এর রাজনীতি সচেতনতা, স্বাধীনতার আকাঙ্খার প্রতি সমর্থন এবং কৈশোরে তার দেখা ঊনসত্তরের গণআন্দোলন, ৭০ এর নির্বাচন এবং ৭১ এ স্বাধীনতাকামী মানুষের উত্তাল উন্মাদনা এবং বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলতে শুরু করার বিষয় উল্লেখ করে ২৫সে মার্চ কি নির্মম, নিষ্ঠূর ভাবে তার পিতাকে প্রথমে হাতে গুলি করে অতঃপর গলায় বেয়োনেট চার্জ করে হত্যা করা হয়েছিল তার বর্ণনা দেন. পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যায় বর্বরতার যে নজির স্থাপন করেছে এর আরো কিছু উদহারণ তোলে ধরেন এর মধ্যে ১২ নং ফুলার রোডে অধ্যাপক মুক্তাদির এবং ডাক্তার মুর্তুজা কে হত্যার কথা ও জানান । জানান, তার মা শামসুন্নাহারের জীবনগাথা দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে কঠিন সংগ্রামের কথা.

ড. আনোয়ার জাহিদ বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনারা ঘুমন্ত বাঙালিদের নির্বিচারে হত্যা করেছে । তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি শিশু ও নারীরা এ ভয়াল কালরাত্রির গণহত্যা বিশ্ব ইতিহাসে এক লজ্জাজনক অধ্যায়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতার সূর্য ফসল ঘরে উঠেছে বর্তমানে অবকাঠামোর উন্নয়ণ হচ্ছে তবে সামাজিক অবক্ষয় ও নীতি নৈতিকতার অধঃপতন নিয়ে চ্যালেঞ্জকে আমাদের মোকাবেলা করতে হবে.

নাসিমা আক্তার বলেন শহীদ পরিবারগুলো অবজ্ঞা, অবহেলায় তাদের কঠিন জীবন সংগ্রাম চালিয়ে এসেছেন আজ ও তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। বার্ডে কাজ করার সুবাদে বঙ্গবন্ধুর পল্লী উন্নয়ণ চিন্তা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নারী ও শিশুদের উন্নয়নে প্রকল্পের ধারণা স্বাধীনতার চেতনাকে উদজীবিত করছে।

কবি অনীকা স্বাতীপ্রভা তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে সমন্বিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানান এবং স্বরচিত দুটি কবিতা পাঠ করে শুনান।