"অপ্রচলিত উদ্ভিদ থেকে মুখরোচক খাদ্য:পুষ্টি পূরণের একটি বাড়তি উৎস"-ড. ছোলায়মান আলী ফকির

বাকৃবি প্রতিনিধি: শিমুল আলু বা কাসাভা, অড়হর, রোজেল বা চুকুরসহ নানাবিধ অপ্রচলিত উদ্ভিদ থেকে চিপস, চপ, কেক, পাকোড়া, পুডিংসহ নানাবিধ মুখরোচক খাদ্য উন্নয়ন কাজ করছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ছোলায়মান আলী ফকির।

অধ্যাপক ছোলায়মান দীর্ঘ দিন ধরে মাঠ পর্যায়ের কৃষি নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং ভোক্তা পর্যায়ে সেগুলোকে ব্যবহার উপযোগী করে তুলেছেন।

অধ্যাপক ছোলায়মান বলেন, পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এসব উদ্ভিদ দেশের মানুষের খাদ্য তালিকায় পুষ্টি পূরণের একটি বাড়তি উৎস হিসেবে যোগ হবে। পাশাপাশি তরুণ উদ্যোক্তারা এসব উদ্ভিদ ও প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্য নিয়ে কাজ করলে কর্মসংস্থানের নতুন একটি দিকও উন্মোচিত হবে।

অপ্রচলিত ওই উদ্ভিদগুলো পতিত জমিতেই অনেক কম রক্ষণাবেক্ষণ খরচে ফলন পাওয়া সম্ভব বলে জানান অধ্যাপক ছোলায়মান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে। কাসাভা, চুকুর বা অড়হর চাষ করতে আবাদি জমির প্রয়োজন নেই। আমাদের আশেপাশে যে পতিত জমি আছে সেখানেই এই উদ্ভিদগুলোর ফলন সম্ভব। কৃষকেরা এসব উদ্ভিদ চাষ করলে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হবার পাশাপাশি কৃষকেরাও লাভবান হবে।

অধ্যাপক ছোলায়মান শিমুল আলু বা কাসাভা সম্পর্কে বলেন, কাসাভা প্রক্রিয়াজাতকরণ করে রুটি, তেলের পিঠা, হালুয়া, পাকোড়া, চিপস, চপ, কেকসহ বিভিন্ন মুখরোচক খাদ্যপণ্য তৈরি সম্ভব হয়েছে। কাসাভা বা শিমুল আলু হলো শিকড়জাত এক ধরনের আলু যা সহজে এবং কম খরচে চাষ করা যায়। এটি চাল ও আলুর উপর নির্ভরশীলতা কমাতে সাহায্য করবে। কাসাভা সিদ্ধ, পুড়িয়ে বা তরকারির সঙ্গে রান্না করে খাওয়া যায়। কাসাভার আটা গমের আটার সঙ্গে মিশিয়ে রুটি, পরোটা, কেক তৈরি করা যায়। এছাড়া, কাসাভার স্টার্চ শিল্পে, বিশেষত বস্ত্র ও ওষুধ শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অড়হর সম্পর্কে ওই অধ্যাপক বলেন, অড়হরের বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে কাবাব, রুটি, পুরি, শিঙাড়া, হালুয়া সহ সাতটি খাদ্য তৈরির সম্ভাব হয়েছে। অড়হর ভাত, ডাল ও মটরশুঁটির বিকল্প হতে পারে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। এটি রোগ প্রতিরোধেও সক্ষম।

রোজেল বা চুকুর সম্পর্কে অধ্যাপক বলেন, রোজেল আঞ্চলিকভাবে চুকাই বা চুকুর নামে পরিচিত যা একটি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন উদ্ভিদ। রোজেল ফুলের বৃতিকে প্রক্রিয়াজাত করে জ্যাম, জেলী, চা, আচার ও জুসসহ বিভিন্ন মুখরোচক খাদ্য ও পানীয় উদ্ভাবন করা যায়। রোজেলের বৃতিতে অ্যান্থোসায়ানিন, ক্যারোটিনয়েড সহ গুরুত্বপূর্ণ এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়ক। এক গাছ থেকে আধা কেজি থেকে দেড় কেজি ফল পাওয়া যায় যা একটি পরিবারের চাহিদা মেটাতে পারে।

উল্লেখ্য, অধ্যাপক ছোলায়মান আলী ফকিরের প্রায় ১০০ টির ও অধিক গবেষণা প্রবন্ধ রয়েছে। বর্তমানে তিনি রঙিন চাল নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।