নদী ও উপকূলীয় অঞ্চলের পানিদূষণ: মাইক্রো-দূষক শনাক্তকরণে আন্তর্জাতিক সেমিনার

রাজধানী প্রতিনিধি: পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য নদী ও উপকূলীয় অঞ্চলের পানির মান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে কৃষি, মৎস্য ও মানবজীবন এই তিন খাতই পানির গুণগত মানের ওপর সরাসরি নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাইক্রো-দূষক, বিশেষ করে কীটনাশক, ওষুধের অবশিষ্টাংশ এবং PFAS (Per- and Polyfluoroalkyl Substances) সারাবিশ্বে উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।

এ বাস্তবতায় আজ ১৫ নভেম্বর ২০২৫ সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি ভবনের কনফারেন্স রুমে “বাংলাদেশের নদী ও উপকূলীয় অঞ্চলের পানিতে মাইক্রো-দূষক (কীটনাশক, ওষুধ এবং PFAS) শনাক্তকরণ ও বিশ্লেষণ” শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়ে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম আয়োজিত আন্তর্জাতিক সেমিনারটি সময়োপযোগী ও বৈজ্ঞানিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশে পানিদূষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকির বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেমিনারটি গবেষকদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে বলে উপস্থিত বক্তাদের বক্তব্যে ফুটে ওঠে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আব্দুল লতিফ। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ড. এফ. এম. আমিনুজ্জামান, পরিচালক, সাউরেস। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. ইয়ারকার ফিক, সহযোগী অধ্যাপক, রসায়ন বিভাগ, উমিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সুইডেন।

সেমিনারে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি রসায়ন বিভাগের সিনিয়র শিক্ষকবৃন্দ প্রফেসর ড. আরিফুল ইসলাম, ড. তাজুল ইসলাম, ড. সিরাজুল ইসলাম, ড. আব্দুল কাইউম, নদী ও উপকূলীয় অঞ্চলের পানিতে মাইক্রো দূষকের উপস্থিতি নির্ণয়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

সাংবাদিক ফয়জুল সিদ্দিকীর উপস্থাপনায় সেমিনারে বাংলাদেশের নদী উপকুলের মাইক্রোদূষক নিয়ে গবেষণার বিষয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়।

ড. মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রাশেদুল ইসলাম, শেরেবাংলা কৃষি ববিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপার্চায প্রফেসর ড. মো. বেলাল হোসেন, ট্রেজারার প্রফেসর আবুল বাশার, নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের চেয়ারম্যান জনাব মো. জাকারিয়া।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রফেসর ড. মো. আব্দুল লতিফ তার বক্তব্যে এ ধরনের গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার জন্য শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও ড. ইয়ারকার ফিককে ধন্যবাদ জানান। একই সাথে এ ধরনের গবেষণা কার্যক্রম যেন থেমে না থাকে সেজন্য সকল প্রকার সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন।

সেমিনারে সরকারের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বেসরকারি উদ্ভাবক, গবেষণা সংস্থা, উন্নয়ন সংস্থা ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মুক্ত আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশের জলজ পরিবেশে ৫০০-এরও বেশি উদীয়মান দূষণকারী পদার্থ (CECs) এবং মাছের নমুনায় তাদের বায়োঅ্যাকিউমুলেশন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত প্রদান করেন।

সেমিনারের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের নদী ও উপকূলীয় অঞ্চলের পানিতে মাইক্রো-দূষকের উপস্থিতি, তার পরিবেশগত প্রভাব এবং জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এই আয়োজন পানি দূষণ রোধ, জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং টেকসই পরিবেশ সুরক্ষায় ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ভূমিকা রাখে।