
এগ্রিলাইফ প্রতিনিধি: মৎস্য চাষে উচ্চ প্রোটিন ও উচ্চ ফ্যাটযুক্ত ফিড ব্যবহারের ফলে মাছের লিভারের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হচ্ছে এবং হজমে জটিলতা দেখা দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বাইল এসিড (Bile Acid) ব্যবহারের গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন পুষ্টিবিদ সাইফি নাসির। তিনি বলেন, বাইল এসিড হলো একটি অ্যামফিপ্যাথিক স্টেরয়েড যৌগ যা স্বাভাবিকভাবে লিভারে কোলেস্টেরল থেকে উৎপন্ন হয় এবং মাছের লিপিড হজম, পুষ্টি শোষণ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পুষ্টিবিদ সাইফি নাসির জানান, ফিশ ফিডে বাইল এসিড যোগ করলে চর্বির ইমালসিফিকেশন বাড়ে, ফলে মাছ সহজে চর্বি ও চর্বি-দ্রবণীয় ভিটামিন (A, D, E, K) শোষণ করতে পারে। এর ফলে মাছের বৃদ্ধি দ্রুত হয়, ওজন বাড়ে এবং ফিডের ব্যবহার দক্ষতা (FCR) উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়। সাইফি নাসির আরও বলেন, বাইল এসিড ফ্যাট মেটাবলিজমকে সক্রিয় রাখে, লিভারের লিপিড জমা কমায় এবং হাই-ফ্যাট ডায়েট ব্যবহারে সহনশীলতা বৃদ্ধি করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও বাইল এসিডের ভূমিকা তুলে ধরেন পুষ্টিবিদ সাইফি নাসির। তিনি বলেন, বাইল এসিড ব্যাকটেরিয়ার এন্ডোটক্সিন নিরসনে কাজ করে, ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী রাখে এবং মাছকে রোগমুক্ত রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া এটি শুধু হজম এজেন্ট হিসেবে নয়, বরং সংকেত অণু হিসেবে কাজ করে বিপাক, অন্ত্রের স্বাস্থ্য এবং মাইক্রোবায়োটা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
পুষ্টিবিদ সাইফি নাসিরের মতে, উদ্ভিজ্জ উপাদান নির্ভর ফিডে কোলেস্টেরলের বিকল্প হিসেবেও বাইল এসিড ব্যবহার করা যায়, যা বিশেষ করে চিংড়ি ও সামুদ্রিক মাছের ফিডের জন্য জরুরি। তিনি বলেন, বাইল এসিড মাছের গ্লুকোজ-লিপিড বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে, গ্লাইকোজেন ভাঙ্গনে সহায়তা করে এবং শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে মাছের পেশীর গুণমান ও মাংসের স্বাদও উন্নত হয়।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, নিয়মিত ও সঠিক মাত্রায় বাইল এসিড ব্যবহার করলে মাছের অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটার ভারসাম্য ভালো থাকে, হজমশক্তি বাড়ে এবং স্ট্রেস সহনশীলতা উন্নত হয়। সাইফি নাসির বলেন, “মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য হাই প্রোটিন–হাই ফ্যাট ফিড ব্যবহার অনিবার্য, ফলে লিভারের ওপর চাপ বেড়ে যায়। এই অবস্থায় বাইল এসিডই লিভার সুরক্ষা ও হজম দক্ষতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।”
সবশেষে পুষ্টিবিদ সাইফি নাসির ফিশ ফিডে বাইল এসিড ব্যবহারের পরিমাণ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, “যদি মাছের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে চাই, তবে ফিশ ফিডে বাইল এসিডের ব্যবহার এখন সময়ের দাবি।”
























