দেশে ৩০% শিশু খর্বাকৃতি, ২১% ওজনস্বল্প

বাকৃবি প্রতিনিধিঃ ‘বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে পুষ্টিহীনতার চিত্র এখনও উদ্বেগজনক। দেশে প্রায় ৩০ দশমিক ৭ শতাংশ শিশু খর্বাকৃতি, ৮ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু অপুষ্টিজনিত ক্ষয়রোগে (ওয়েস্টিং) ভুগছে এবং ২১ দশমিক ৮ শতাংশ শিশু ওজনস্বল্পতায় ভুগছে। এছাড়া, খর্বাকৃতি ও ওজনস্বল্পতার হার শহর ও গ্রামাঞ্চলের শিশুদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন।

এছাড়াও, দেশে বর্তমানে প্রজননক্ষম বয়সী (১৫–৪৯ বছর) বিবাহিত নারীর সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ নারী পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন যাদের মধ্যে ৫০ লাখ নারী অপুষ্টির কারণে কম ওজনের এবং ১ কোটি ২০ লাখ নারী অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতায় আক্রান্ত। অপুষ্টিজনিত সমস্যার টেকসই সমাধানের অন্যতম কার্যকর উপায় হলো ফুড ফোর্টিফিকেশন (খাদ্য সমৃদ্ধকরণ)।’

আজ বুধবার (১৩ আগস্ট) সকালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি অনুষদীয় ডিন সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে বৃহৎ পরিসরে ফুড ফর্টিফিকেশন (খাদ্য সমৃদ্ধকরণ)’ শীর্ষক লার্নিং-শেয়ারিং কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শোয়েব।

 মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি আরও বলেন, ‘ফুড ফোর্টিফিকেশন বা খাদ্য সমৃদ্ধকরণ হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে কোনো খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে এক বা একাধিক অনুপুষ্টি উপাদান (ভিটামিন বা খনিজ) নির্দিষ্ট পরিমাণে মিশিয়ে খাদ্যটির পুষ্টিমান বৃদ্ধি করা হয়। বর্তমানে রাইস ফোর্টিফিকেশনে ছয়টি পুষ্টি উপাদান সংযোজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব পুষ্টি উপাদানগুলো হলো- ভিটামিন এ, বি-১ ও বি-১২, ফোলিক এসিড, আয়রন এবং জিংক। এছাড়াও ভোজ্য তেলে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধকরণ করার মাধ্যমে নারী ও শিশুর ভিটামিন-এ ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।’

 ড. শোয়েব আরও জানান, ‘এসব পুষ্টি উপাদান সরবরাহের মাধ্যমে বিভিন্ন বয়সের মানুষের পুষ্টি ঘাটতি পূরণ সম্ভব হবে। তবে ফোর্টিফিকেশন শুরু করলেই যথেষ্ট নয় , এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও জরুরি। ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছানো পর্যন্ত খাদ্যের গুণগত মান, সঠিক ডোজ, নিরাপদ সংরক্ষণ এবং মান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য প্রশিক্ষণ ও দক্ষ জনবল তৈরির বিকল্প নেই।’

বাকৃবির প্রফেসর মুহাম্মদ হোসেন কেন্দ্রীয় গবেষণাগার (পিএমএইচসিএল) এবং আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (জিএআইএন)-এর যৌথ উদ্যোগে এই কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়। বাকৃবির প্রফেসর মুহাম্মদ হোসেন কেন্দ্রীয় গবেষণাগারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আমির হোসেনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সার্ক কৃষি সেন্টারের পরিচালক ড. মো. হারুনুর রশিদ এবং জিএআইএন-এর বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. রুদাবা খন্দকার। এছাড়াও কর্মশালায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের প্রায় ১১০ জন শিক্ষক ও গবেষক উপস্থিত ছিলেন।

বাকৃবি উপাচার্য বলেন, ‘বাংলাদেশে অপুষ্টি একটি বড় জনস্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ। গবেষণালব্ধ প্রযুক্তি, সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা ও নীতি সহায়তার সমন্বয়ে ফুড ফর্টিফিকেশন কর্মসূচিকে সফল করতে হবে। বাকৃবি এই বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।’

 কর্মশালায় ‘অন্যান্য দেশে ফুড ফর্টিফিকেশন বিষয়ক ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিএআইএন-এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. আবুল বাশার চৌধুরী। এসময় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বৃহৎ পরিসরে খাদ্য ফোর্টিফিকেশন সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব অপরিহার্য। নীতি, প্রযুক্তি এবং জনসচেতনতা—এই তিনটি উপাদান সমন্বিতভাবে কাজ করলে দেশে অপুষ্টি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।’

 কর্মশালায় সূচনা বক্তব্য দেন বাকৃবির ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গোলজারুল আজিজ। তিনি দেশের জাতীয় ফুড ফর্টিফিকেশন কর্মসূচির অংশ হিসেবে একটি বিশেষ কেন্দ্র স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই, কৌশলপত্র প্রণয়ন, খাদ্যমান নিয়ন্ত্রণ, বাজার তদারকি এবং দেশের চাহিদা অনুযায়ী যুগোপযোগী ফুড ফর্টিফিকেশন কর্মসূচি গ্রহণের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়াও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, অপুষ্টিজনিত রোগবালাই হ্রাস এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে এই কর্মসূচির ভূমিকা এই কর্মশালায় তুলে ধরা হয়।