আবুল বাশার মিরাজ, বিশেষ প্রতিনিধি: বিশ্বব্যাপী ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর অক্টোবরের দ্বিতীয় শুক্রবার পালিত হয় বিশ্ব ডিম দিবস। ২০২৪ সালের বিশ্ব ডিম দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল “ডিমে পুষ্টি, ডিমে শক্তি, ডিমে আছে রোগমুক্তি”। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় আলোচনা সভা, পণ্যের প্রদর্শনী এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম।
আজ শুক্রবার (১১ অক্টোবর, ২০২৪) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশনের বিশ্ব ডিম দিবসের বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের, ওয়াপসা, বিপিআইসির উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মিজ্ ফরিদা আখতার, বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর, ওয়াপসা বাংলাদেশ শাখার সভাপতি মসিউর রহমান এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডাঃ মোহাম্মদ রেয়াজুল হক।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: শওকত আলী।।
আলোচনা সভায় বক্তারা বাংলাদেশের পোলট্রি শিল্পের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোকপাত করেন। তাঁরা বলেন, ডিম উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণে ডিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, বিশেষ করে শিশুদের মস্তিষ্কের গঠন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ডিমের পুষ্টিগুণ অপরিহার্য।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি মিজ্ ফরিদা আখতার তাঁর বক্তব্যে বলেন, “ডিম হলো আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকার অন্যতম পুষ্টিকর একটি উপাদান। এতে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। ডিম শুধু পুষ্টির চাহিদা মেটায় না, এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও কার্যকর। বাংলাদেশে ডিম উৎপাদন প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এ ক্ষেত্রে আমরা আন্তর্জাতিক মান ধরে রাখার চেষ্টা করছি।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ডিমের সহজলভ্যতা এবং এর পুষ্টিগুণের কারণে এটি সকল শ্রেণির মানুষের খাদ্য তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রমের ফলে বর্তমানে ডিমের চাহিদা এবং গ্রহণযোগ্যতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, “ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য এ ধরনের উদ্যোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের পোলট্রি খাত এখন আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী এবং এতে কর্মসংস্থান ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে বড় ভূমিকা পালন করছে। ডিমের উৎপাদন বাড়াতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে এবং পোলট্রি সেক্টরকে আরো শক্তিশালী করতে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করছি।”
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডাঃ মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, “পোলট্রি সেক্টরে আমাদের অর্জন অনেক। তবে আমাদের সামনে আরও বড় লক্ষ্য রয়েছে। আমরা চাই প্রতিটি মানুষ তার দৈনন্দিন পুষ্টির চাহিদা মেটাতে ডিমের মতো সস্তা এবং সহজলভ্য খাদ্য গ্রহণ করুক।”
পরে বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে ডিম বিষয়ক রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যোগ দেন মিজ্ ফরিদা আখতার। ইলান্ক ফার্মা'র সৌজন্যে "বিশ্ব ডিম দিবস'২০২৪" উপলক্ষে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। রচনা প্রতিযোগিতায় দুটি বিভাগ নির্ধারন করা ছিল যেখানে ক-বিভাগ-এর বিষয়ঃ "বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ডিমের ভূমিকা"। অপরদিকে খ-বিভাগ এর বিষয়ঃ "সুস্থ্য ও মেধাবী জাতি গঠনে ডিমের ভূমিকা"।
"Veterinary Doctors Association of Bangladesh (VAB)" এবং "The Vet Executive"-এর যৌথ আয়োজনে এ রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা ডিমের পুষ্টিগুণ, স্বাস্থ্য উপকারিতা, ডিমের সহজলভ্যতা এবং ডিম খাওয়ার বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব নিয়ে তাদের রচনায় আলোকপাত করেন। প্রতিযোগিতায় দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
প্রদর্শনী ও অন্যান্য আয়োজন: বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশনের কনভেনশনের ১ নং হলে পোলট্রি সেক্টরের বিভিন্ন কোম্পানি যেমন এসিআই, প্যারাগন, কোয়ালিটি, একমি, আরআরপি, ইউনিক ফুডস, পিনাকল এগ্রো তাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এতে পোলট্রি ফিড, স্বাস্থ্যকর ডিম উৎপাদন, এবং বাজারজাতকরণে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতামূলক তথ্য উপস্থাপন করা হয়।