এগ্রিলাইফ২৪ ডটকমঃ কৃষকের দোরগোড়ায় মাটি পরীক্ষার গুরুত্ব অনুধাবনে, চাষিদের উদ্বুদ্ধকরণে ও মৃত্তিকার সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সারাদেশে ১০টি ভ্রাম্যমাণ মৃত্তিকা পরীক্ষা গবেষণাগার (এমএসটিএল) রবি-২৪ কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন করা গয়েছে।
আজ রবিবার (১৭ নভেম্বর) এসআরডিআই এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম 'ভ্রাম্যমাণ মৃত্তিকা পরীক্ষা গবেষণাগার (MSTL) রবি-২০২৪' কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রতিষ্ঠানটির সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত চৌকস ও ডায়নামিক মহাপরিচালক ড. বেগম সামিয়া সুলতানা।
মৃত্তিকার রবি-২৪ মৌসুমের ১০টি ভ্রাম্যমাণ মৃত্তিকা পরীক্ষা গবেষণাগার (এমএসটিএল- কর্ণফুলী, তিতাস, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র,
মধুমতি, রূপসা, কীর্তনখোলা, তিস্তা,করতোয়া, সুরমা) এর মাধ্যমে সারাদেশে ১৭ নভেম্বর থেকে ৫৬টি উপজেলায় একযোগে সরাসরি মাটি পরীক্ষা করে সার সুপারিশ কার্ড বিতরণ কর্মসূচির যাত্রা শুরু হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) যেখানে মাটি, পানি, সার, উদ্ভিদের নমুনা বিশ্লেষণ, ফসল বিন্যাস ভিত্তিক সার সুপারিশ কার্ড প্রদান, সয়েল সার্ভে ও মাটির স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে।
ড. বেগম সামিয়া সুলতানা বলেন, জনগণের দোড়গড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে এবং মাটি পরীক্ষা করে জমিতে সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগে কৃষক ভাইদের উদ্বুদ্ধ করতে ১৯৯৬ সাল থেকে ভ্রাম্যমান মৃত্তিকা পরীক্ষা গবেষণাগার চালু রয়েছে। বর্তমানে দেশব্যাপী ১০টি ভ্রাম্যমান মৃত্তিকা পরীক্ষা গবেষণাগারের মাধ্যমে বছরে রবি ও খরিফ মৌসুমে (২ বার) মাটি পরীক্ষা করা হয়। বরাবরের মত এবারও আমরা রবি-২৪ মৌসুমে ১০ টি ভ্রাম্যমাণ ল্যাবের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলার ৫৬ টি উপজেলায় একযোগে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: ছাইফুল আলম বলেন, এরকম মোটিভেশানাল প্রোগ্রাম কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করবে এবং মাটি পরীক্ষা করে সার সুপারিশ করলে সারের অপচয় রোধ হয়। প্রতিবছর টনের পর টন সার আমদানি করতে হয়, কৃষকের সঠিক ধারণা না থাকায় ইচ্ছেমতো সার প্রয়োগ করে যা অনেকাংশেই কাজে লাগে না। এসআরডিআই এর যে কোনো কর্মসূচিতে অতীতের মতো আগামী দিনেও সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। আমরা প্রতিটি উপজেলা কৃষি অফিসকে মৃত্তিকার ভ্রাম্যমাণ পরীক্ষাগারের বিষয়টি অবহিত করেছি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত এসআরডিআই এর কর্মকর্তারা মাটি পরীক্ষার গুরুত্ব, সুষম সার ব্যবহার, মৃত্তিকার সার সুপারিশ কার্ড গ্রহণ, ভেজাল সার প্রয়োগ না করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রতিটি স্টেশনে সাধারণত ৩-৫ দিন অবস্থান করবে এবং মাটি পরীক্ষা ও ফসলের সুষম মাত্রার সার সুপারিশ কার্ড প্রদান করবে। এসব উপজেলার আগ্রহী কৃষক ভাইয়েরা নমুনা প্রতি মাত্র ২৫ টাকা হারে নির্ধারিত ফি প্রদান করে ( প্রকৃত খরচ ৪৪০ টাকা মাত্র) মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে সুষম মাত্রার সার সুপারিশ কার্ড নিতে পারবেন।
মৃত্তিকা বিশেষজ্ঞনা বলেন, মাটি পরীক্ষা করে সুষম সার প্রয়োগ করলে ফলন ১৫-২০% বৃদ্ধি পায়, উৎপাদন খরচও ১০-১৫% কম লাগে, সারের অতিরিক্ত ব্যবহার হ্রাস পায়, সর্বোপরি পরিবেশ দূষণ (মাটি, পানি দূষণ) থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
অনুষ্ঠানে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী কর্মকর্তা কর্মচারীসহ সুধীজন উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আ ফ ম মঞ্জুরুল হক, আমীর মো: জাহিদ, মো: আব্দুল হালিম, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: আনিছুর রহমান, মো: জয়নাল আবেদিন, ড. নুরুল হুদা আল মামুন, ড. মো: ফারুক হোসেন, কাজী কাইমূল ইসলাম, মো: আমিনুল ইসলাম, ড. এস এম সামচুজ্জামান,ড. লুৎফর রহমান, ড. হুমায়ুন কবির সিরাজী, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ কে এম জগলুল পাশা, মহসিন ফরাজী, সেলিনা তাসনীন খান, ড. মোছা: নাছরীন বেগম, ড. সালমা জান্নাত, আইরিন সুলতানাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
১০ টি ভ্রাম্যমাণ ল্যাবের ঢাকার MSTL যমুনার মাধ্যমে সারাদেশে একযোগে কার্যক্রম শুরু হয়। অনুষ্ঠান শেষে যমুনার টীম লিডার মো: খায়রুল ইসলাম বাশার ও টিমের সদস্য মো: হাছিবুল হক, মো: আব্দুর রহমান টীম নিয়ে মুন্সিগঞ্জের দিকে রওনা করেন।
এদিকে আজ সিসিবিএস প্রকল্পের অর্থায়নে কারিগরি কর্মকর্তাদের জিআইএস বেস প্রশিক্ষণেরও উদ্বোধন করেন মৃত্তিকার মহাপরিচালক ড. বেগম সামিয়া সুলতানা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো: ছাইফুল আলম।