আবুল বাশার মিরাজ, বাকৃবি: সারাবিশ্বে স্কুইড, অক্টোপাস দিয়ে তৈরিকৃত খাবার বেশ জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে স্কুইড দিয়ে তৈরিকৃত কোনো খাবার এখনও তেমনভাবে খাওয়া হয় না। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সেন্টারের (বাউরেস) অর্থায়নে অধ্যাপক ড. ফাতেমা হক শিখা ও অধ্যাপক ড. মো. ইসমাইল হোসেন বাংলাদেশের সমুদ্র থেকে আহরিত স্কুইড নিয়ে একটি গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা করেন।
এই গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে তারা স্কুইড দিয়ে নানা খাবার তৈরি করতে সফল হন। এদের মধ্যে স্কুইড দিয়ে তৈরি স্কুউড রিং, ধূমায়িত স্কুইড, স্কুইডের আচার ও স্কুইড স্ট্রিপ অন্যতম। খাবারগুলো ফ্রিজিং করেও দীর্ঘদিন রেখে রেডি টু হিসাবে যখন খুশি খাওয়া যাবে বলে দাবি গবেষকদের।
গবেষকরা জানান, 'সমুদ্র থেকে আহরিত সেফালোপোডদের মধ্যে এই স্কুইড পুষ্টিগুণ ও স্বাদের দিক থেকে কোনো অংশেই অন্যদের তুলনায় কম নয়। রান্না করার পূর্বে প্রোটিন এর শতকরা পরিমান পাওয়া গিয়েছিলো ১০.৭ ভাগ। গবেষণার জন্য স্কুইড দিয়ে বিভিন্ন ধরনের মজাদার খাবার তৈরি করে বিভিন্ন অবস্থায় সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিলো, খাদ্য দ্রব্যগুলোর জীবনকাল পরীক্ষা করে দেখার জন্য।
পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে যে, প্রথমত স্কুইড দিয়ে তৈরিকৃত স্কুইড রিং প্যানেল টেস্টে অংশগ্রহণকারীরা ভীষণভাবে পছন্দ করেছিলেন। যখন মেরিনেট করে রাখা হয়েছিলো "রেডি টু কুক" প্রোডাক্ট হিসেবে কক্ষ তাপমাত্রায় মাত্র এক দিনের মধ্যেই স্কুইড রিংগুলো খাবারের অনুপযুক্ত হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু যখন রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করা হয়েছিলো তখন জিপার পলিথিন প্যাকেটে স্কুইড রিংগুলো খাবারের উপযুক্ত ছিলো ৯ দিন পর্যন্ত আর ভেকুয়াম সিলড প্যাকেটে ১৩ দিন পর্যন্ত।
অন্যদিকে ফ্রোজেন তাপমাত্রায় খাবার উপযুক্ত ছিলো ৩০ দিন পর্যন্ত। স্কুইড দিয়ে আরো ৩ ধরনের খাদ্যদ্রব্য তৈরি করা হয়েছিলো- ধূমায়িত স্কুইড, স্কুইডের আচার ও স্কুইড স্ট্রিপ। এসব খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে ধূমায়িত স্কুইড কক্ষ তাপমাত্রায় খাবারের জন্য উপযুক্ত ছিলো মাত্র ৭ দিন। কিন্তু যখন রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করা হয়েছিলো তখন খাবারের জন্য উপযুক্ত ছিলো ২১ দিন। স্কুইড দিয়ে তৈরিকৃত আচার কক্ষ তাপমাত্রায় খাবারের জন্য উপযুক্ত ছিলো ৩০ দিন। অন্যদিকে রেফ্রিজারেশন তাপমাত্রায় খাবারের জন্য উপযুক্ত ছিলো ১২০ দিন। স্কুইড দিয়ে স্ট্রিপ তৈরি করে ফ্রোজেন তাপমাত্রায় রাখা হয়েছিলো, যা ৫৬ দিন পর্যন্ত খাবারের উপযুক্ত ছিলো।'
গবেষকরা আরো জানান, 'স্কুইড রিং এর মতো ধূমায়িত স্কুইড, স্কুইডের আচার, স্কুইড স্ট্রিপও খুবই পছন্দ করেছিলেন প্যানেল টেস্টে অংশগ্রহণকারীরা। আশা করা যায় যদি স্কুইড দিয়ে এ ধরনের "রেডি টু কুক/রেডি টু ইট" বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য তৈরি করা গেলে ও সাপ্লাই চেইনে নিয়ে আসা সম্ভব হলে তাহলে ভোক্তাগণ যেমন নতুন স্বাদের খাবার পাবেন। এছাড়াও আমিষের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবেন, তেমনই এর সাথে জড়িত স্টেকহোল্ডাররাও লাভবান হবেন।'