আবুল বাশার মিরাজ: একটি গাছ গড়ে পঞ্চাশ বছরে যে উপাদান ও সেবা দিয়ে থাকে তার আর্থিকমূল্য বিবেচনা করলে গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় চল্লিশ লাখ টাকার অংকে। একটি গাছ এক বছরে দশটি এসি’র সমপরিমাণ শীতলতা দেয়, ৭৫০ গ্যালন বৃষ্টির পানি শোষণ করে, ৬০ পাউন্ড ক্ষতিকর গ্যাস বাতাস থেকে শুষে নেয়। আর সেটা যদি নিম গাছ হয় তাহলে এর ব্যাপকতা কয়েকগুন বেড়ে যায় কেননা নিম ,ঔষধি গাছ যার ডাল, পাতা, রস, সবই কাজে লাগে। শুধু নিম দিয়েই নিরাময় হয় ২২টি রোগ। নিমের পাতা থেকে আজকাল প্রসাধনীও তৈরি হচ্ছে। কৃমিনাশক হিসেবে নিমের রস খুবই কার্যকর। নিমের কাঠও খুবই শক্ত। এ কাঠে কখনো ঘুণ ধরে না। পোকা বাসা বাঁধে না। উইপোকা খেতে পারে না।
এই লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে পরিবেশ, ভ্রমণ ও অ্যাভিয়েশন বিষয়ক ‘গো উইথ আশরাফুল আলম’ নামক ফেসবুক পেইজের কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম ঢাকায় পাঁচ শতাধিক নিম গাছ রোপন করেছেন। গুলশান-বনানী লেকপাড় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গত এক সপ্তাহে এই গাছগুলো লাগানো শুরু হয়ে আজ (শনিবার, ৩১ অগাস্ট) কার্যক্রমটি শেষ হল। তবে এর পাশাপাশি আরো অনেক ধরনের ফলজ ও সৌন্দর্য বর্ধনের গাছও লাগানো হয়। এই মহাকর্মযজ্ঞ সম্পাদনে সহযোগী হিসেবে ছিল মিশন গ্রিন বাংলাদেশ ও এসএমএস এনভায়রনমেন্টাল এলায়েন্স।
কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম বলেন “আমরা যে পরিমান অক্সিজেন প্রকৃতি থেকে বিনামূল্যে নিচ্ছি সেটা কোন হাসপাতাল থেকে নিতে গেলে প্রতিদিন বিপুল অঙ্কের অর্থ গুনতে হত। জীবনে আমরা সবকিছুর জন্য অর্থ খরচ করলেও কেবলমাত্র প্রতিনিয়ত অক্সিজেন গ্রহনের জন্য খরচ করি না। কেউ না কেউ গাছ লাগিয়েছে বলেই কিন্তু আমরা নির্মল বাতাস গ্রহন করতে পারছি। তাই আসুন আজ থেকে নিজের অক্সিজেনের যোগান নিজেই দেই”। তিনি আরও বলেন “আমরা গাছ লাগানোর পাশাপাশি মিশন গ্রিন বাংলাদেশের সহায়তার গাছগুলোর প্রতিনিয়ত দেখভালও করব”।
গাছ লাগানোর প্রসঙ্গে মিশন গ্রিন বাংলাদেশের আহ্বায়ক আহসান রনি বলেন “সারাদেশকে আমরা সবুজ করতে চাই। দেশ সবুজ হলে অনেকাংশে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিই শুধু কমবে না বরং আমাদের দেশ ফিরে পাবে তার হারানো রূপ। আমরা ফিরে পাব সবুজ, শ্যামল বাংলাদেশ”।
প্রসঙ্গত, ঢাকা শহরের কংক্রিটের কাঠামো মূলত শহরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে৷ অধিক জনসংখ্যা, অতিরিক্ত নগরায়ন, যানবাহন, জলাধার ও গাছপালা কমে যাওয়ার কারণে ঢাকার পরিবেশ দূষণ বিশ্বের অন্যান্য বড় শহরের তুলনায় অনেক বেশি৷ ঢাকা শহরের গাছপালার পরিমাণ ১৯৮৯ সালে ছিল ২৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ, যা ধীরে ধীরে কমে ১৯৯৯ ও ২০০৯ সালে যথাক্রমে ১৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ ও ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশে নেমে এসেছে৷ অন্যদিকে ঢাকা শহরের বাৎসরিক গড় তাপমাত্রা ১৯৮৯ সালে ছিল ১৮ থেকে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কিন্তু এটি ২০০৯ সালে বেড়ে দাড়িয়েছে ২৪ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ আর এই বছর কত হয়েছে সেটা আমরা প্রায় সবাই জানি।
এদিকে ঢাকার বাহিরে যে পরিমান বনায়ন কর্মসূচি নেয়া হলেও ঢাকাতে সেটা অপ্রতুল। যে পরিমাণে গাছ কাঁটা হয় তার অল্প পরিমাণই রোপণ করা হয়। গাছ শুধুমাত্র কার্বনডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন ত্যাগ করে মানুষকে বাচায় না বরং বৃষ্টিপাত ঘটাতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও, গাছের পাতা, ডাল, বাকল, নানান ধরনের ঔষধ হিসাবেও ব্যবহার করা যায়। কিন্তু বৃক্ষ নিধনের ফলে গরমকালে একদিকে তাপমাত্রা বাড়ছে এবং অন্যদিকে শীতকালে ঠান্ডার পরিমান বেড়ে যাচ্ছে। সেই সাথে সাথে পরিবেশ পড়ছে হুমকির মুখে। তাই আমাদেরকে নিজেদের যায়গা থেকে যতটা সম্ভব গাছ লাগাতে হবে।