মো: আব্দুর রউফ : ড্রাগন ফল মূলত আমেরিকার প্রসিদ্ধ একটি ফল যা বর্তমানে আমাদের দেশেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। নরম শাঁস ও মিষ্ট গন্ধ যুক্ত এই ফল খেতে অনেক সুস্বাদু আর তার সাথে এই ফল ভিটামিন সি, মিনারেল পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং ফাইবারের উৎকৃষ্ট উৎস। ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই ড্রাগন ফল হজমে সহায়তা করে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি, ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই ফল।
ড্রাগন ফল সাধারণত সারা বছরেই চাষ করা যায়। এই ফলের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো একবার গাছ রোপণ করে অন্তত ২০ বছর ফল পাওয়া যায়। ড্রাগন ফলের ফুল রাতে ফোটে এবং সকালে বন্ধ হয়ে যায়। ফুলের কলি আসার পর থেকে সাধারণত ১৪-১৫ দিনের মাথায় ফুল ফোটে। অনেক সময় গাছে প্রচুর ফুল আসলেও ফুল ঝরে পরার কারণে ফল সেট হয় না।
বিভিন্ন ধরনের কৃষিজ ফসলে সারের অভাবে অপুষ্টিজনিত বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। যেসব সার ফসলের জন্য কম লাগে কিন্তু নির্ধারিত মাত্রায় ব্যবহার না করলে ফসলের জন্য সমস্যার সৃষ্টি হয় সেসব সারের মধ্যে বোরন অন্যতম। বোরন সার গাছের কোষের দেয়াল শক্ত করে, শিকড় ও ডগার বৃদ্ধি করে, ফল ফেটে যাওয়া রোধ করে, নিষিক্তকরণ ও সীম জাতীয় দানাদার ফলের দানার গঠনে সাহায্য করে, ফলন বৃদ্ধি করে।
বোরনের অভাবে গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। ফুল সংখ্যায় কম আসে এবং ফুল ঝরা বৃদ্ধি পায়। ফল আকারে ছোট হয় ও ফেটে যায়। ফল এবড়ো খেবড়ো বা বিকৃত হয়, আভ্যন্তরিন দানা পুস্ট হয় না, অপরিপক্ক অবস্থায় ফল ঝরে যায়।
ফলগাছে ফুল আসার আগে প্রয়োগ করলে ভাল রেজাল্ট পাওয়া যাবে, ছোট টবে আধা চা চামচ বড় টবে এক চা চামচ আর হাফড্রামে এক টেবিল চামচ। টবের উপরের মাটি এক/দেড় ইঞ্চি তুলে টবের ভিতরের মাটির সাথে ভাল করে মিশিয়ে পরে ঐ তোলা মাটি গুড়া করে সুন্দর করে ঢেকে দিতে হবে।
ফল বৃদ্ধির সময় জিংক প্রতি লিটার জলে ১ গ্রাম, বোরন (বোরাক্স/ বরিক অ্যাসিড) প্রতি লিটারে ২ গ্রাম একত্রে ১ লিটার জলে মিশিয়ে ২০-২২ দিন পর প্রথমবার এবং ৪০-৪৫ দিন পর ২য় বার স্প্রে করলে ফল ঝরে পড়া ও ফাটা উভয় সমস্যা কমে যায়। যেসব গাছে বারোমাস ফল থাকে ২ মাস পর পর, একবার ফল দেয় ঐ গাছে বছরে একবার, দুইবার ফল দেয় ফুল আসার এক মাস আগে একবার বোরন প্রয়োগ করলে ভাল রেজাল্ট পাওয়া যাবে।
বোরনের অভাব পূরণে যদি সময়মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তাহলে ফসলের ভালো ফলন পাওয়া যায়। বোরন পরিমাণে যেমন খুব বেশি লাগে না, তেমনি বেশি প্রয়োগ করলেও উল্টো ফল দেয় অর্থাৎ বিষক্রিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। ফলন কমে যায়। তাই সঠিক মাত্রায় ও সঠিক সময়ে বোরন প্রয়োগ করা জরুরি নয়তো অতিরিক্ত প্রয়োগের ফলে ফলন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
ড্রাগন ফল গাছের সঠিক পরিচর্যা না করলে ফলন ভালো হবেনা। যদিও ড্রাগন ফল গাছে তেমন একটা রোগ বালাইয়ের আক্রমন হয়না তবে পারিপার্শ্বিক অন্যান্য যত্ন নিয়মিত নিতে হয়। চারা লাগানোর পর ড্রামটি রোদ যুক্ত স্থানে রাখুন। এটি ক্যাকটাস জাতীয় গাছ বলে চাষে খুব বেশি পানি দিতে হয়না। চারায় পানি দেয়ার সময় লক্ষ্য রাখুন যেন গোড়ায় পানি না জমে। ড্রামের ভিতরের বাড়তি পানি সহজেই বের করে দেবার জন্য ড্রামের নিচের দিকে ৪ থেকে ৫ টি ছিদ্র করে দিন মাটি ভরাট করার পুর্বেই।
ড্রাগন গাছের ডালপালা লতার মত হওয়ার কারনে গাছের হালকা বৃদ্ধির সাথে সাথেই খুঁটির সাথে বেঁধে দিবেন এতে করে গাছ সহজেই ঢলে পরবেনা। এই ভাবে পরিচর্যা করলে আপনি আশানুরোপ ড্রাগণ ফল পাবেন ।
লেখকঃ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ,বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)
বাকৃবি চত্বর, ময়মনসিংহ-২২০২