এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: "নিরাপদ প্রাণিজ আমিষের প্রতিশ্রুতি, সুস্থ, সবল, মেধাবী জাতি" এই প্রতিপাদ্য নিয়ে- Donor Agencies -এর অর্থায়নে পরিচালক, কৃত্রিম প্রজনন দপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন প্রোগ্রামের অংশ সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলাধীন ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নে ডিজিটাল কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রমের Database সংরক্ষনের নিমিত্ত Android Apps পাইলটিং কর্মসূচীর উদ্বোধন করা হয়েছে।
আজ ২২ জানুয়ারী (বুধবার) দুগ্ধ ও গবাদিপশু উন্নয়ন খামার, টিলাগড়, সিলেট-এ আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিবিদ মোঃ শাহজামান খান, পরিচালক, কৃত্রিম প্রজনন দপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ১) কৃষিবিদ মোঃ শহিদুল ইসলাম (বাদশা), উপপরিচালক, দুগ্ধ ও গবাদিপশু উন্নয়ন খামার, টিলাগড়, সিলেট, ২) ড. মোঃ সফিকুর রহমান (শশী), উপপরিচালক (পরিসংখ্যান) , কৃত্রিম প্রজনন দপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও ৩) ডাঃ রনজিত কুমার আচার, উপপরিচালক, জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র, সিলেট।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডাঃ মোঃ মারুফ হাসান, পরিচালক, বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর, সিলেট বিভাগ, সিলেট।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, কৃষিবিদ মোঃ নুরুল ইসলাম, উপপরিচালক, বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর, সিলেট, ডাঃ মোঃ আছির উদ্দিন, ডেপুটি চীফ ইপিডেমিওলজিষ্ট, বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর, সিলেট বিভাগ, সিলেট, ডাঃ মোঃ জোনায়েদ কবীর, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, গোলাপগঞ্জ, সিলেট, ডাঃ নাহিদ আনজুমান বানু সুমী, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, সিলেট সদর, সিলেট, ডাঃ মোঃ আরিফ, থেরিওজেনোলজিষ্ট, জেলা কৃত্রিম প্রজনন প্রজনন কেন্দ্র, সিলেট, জনাবা নুশরাত জাহান, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র, সিলেট, ডাঃ মোঃ মনির হোসেন, টীম লীড, এমপাওয়ার সফটওয়ার কোম্পানী, বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে বিশেষজবঞ বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সরকারি বেসরকারি কৃত্রিম প্রজনন সেবা, প্রান্তিক পর্যায়ে পৌছানোর ক্ষেত্রে প্রধান একটি সমস্যা হচ্ছে রের্কড সংরক্ষন ব্যবস্থা । যা বর্তমানে একজন কৃত্রিম প্রজনন কর্মী প্রিন্টিং খাতায় অ্যানালগ পদ্ধতি বা রেজিষ্টার পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করছে। কৃত্রিম প্রজনন করানোর পর সাধারণত ইউনিয়ন কৃত্রিম প্রজনন পয়েন্ট অথবা উপ-কেন্দ্রের সাথে খামারীর তেমন কোন যোগাযোগ থাকে না। খামারীর কৃত্রিম প্রজনন সম্পর্কে উপযুক্ত জ্ঞান না থাকায় বিভিন্ন ধরণের বিভ্রান্তি তৈরী হয়।
তারা আরো বলেন, যথাযথভাবে তথ্য সংরক্ষণের অভাবে সঠিক জাত ও এর ধারাবাহিকতা সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায় না। খামারীগণ গর্ভ পরীক্ষকরণের সময় সম্পর্কিত হিসাব ও বাচ্চা প্রসবের সঠিক তারিখ অনেকক্ষেত্রেই সংরক্ষণ করতে পারে না। প্রজনন কাজে ব্যবহৃত ষাঁড় ও তার সিমেনের কর্মক্ষমতা সম্পর্কে সঠিক কোন ডাটাবেইজ নেই। সেবা গ্রহিতা ও সেবাদাতার সাথে নিবিড় যোগাযোগ না থাকায় ও সঠিক জ্ঞানের অভাবে খামারীরা উচ্চ মু্ল্যে বিদেশী সিমেন, ভ্রূণ কিনতে আগ্রহী হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে জন্ম হওয়া বাছুরের সংকরায়নের শতকরা হার সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা না থাকায় সেবা গ্রহীতা বিভ্রান্তির স্বীকার হয়। আবার বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতি/রেজিষ্টার পদ্ধতি বিদ্যমান থাকায় ২.৫ বছর পরে উৎপাদিত বাচ্চার বংশপরিচয় বা পেডিগ্রি সঠিকভাবে সংরক্ষণ হচ্ছে না। এ কারণে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক গাভী পালনকারী এবং ডেইরী খামারী কাংখিত বা প্রত্যাশিত ফলাফল হতে বঞ্চিত হচেছ এবং অনেক ক্ষেত্রে খামার বন্ধ করছে। তাই, প্রজননকৃত গাভীর সঠিক তথ্য সংরক্ষণে ডিজিটাল সফটওয়ার ব্যবস্থা চালু করলে এ অবস্থা থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন অলোচকরা ।
এ প্রেক্ষিতে কৃত্রিম প্রজননের তথ্য আরও সহজভাবে প্রান্তিক খামারী পর্যায়ে দ্রুত পৌছানো ও সঠিক তথ্য সংগ্রহ-সংরক্ষনের দীর্ঘ মেয়াদী উদ্দেশ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও USAID এর যৌথ উদ্যোগে একটি ডিজিটাল পদ্ধতির এন্ড্রয়েড এপস/ওয়েবভিত্তিক সফটওয়ার তৈরির কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ওয়েবভিত্তিক এই এপ্লিকেশনটির যাবতীয় কাজ শেষ হওয়ায় নভেম্বর ২০২৪ থেকে পাইলটিং কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা যায় আগামী ফেব্রুয়ারী ২০২৫ মাসের মধ্যে পাইলটিং শেষ হলে, প্রাপ্ত ডাটা থেকে তথ্য বিশ্লেষন, সুবিধা ও অসুবিধা সমুহ দুরীকরন সহ Fine Tuning এর মাধ্যমে সারা দেশে এক যোগে এপ্লিকেশনটি/সফটওয়ার চালু করা সম্ভব হবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও ইউএসএইড-এর যৌথ উদ্যোগে সারাদেশে কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রমের ডাটা সংরক্ষন, বিশ্লেষন ও তথ্য উপাত্ত নিয়ে একটি ডিজিটাল সফটওয়ার তৈরী করা হয়েছে। উক্ত সফটওয়ারের Field Trial বাংলাদেশের ৮টি ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর, রাজশাহী বিভাগে পাইলটিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ সিলেট বিভাগে উদ্বোধনী করা হলো।
এপ্লিকেশন বা সফটওয়ার তৈরীর উদ্দেশ্য বা প্রত্যাশিত দিক সমূহ-
Ø তথ্য সংরক্ষণে ডিজিটাল ব্যবস্থার প্রবর্তন ।
Ø বাংলাদেশের সকল প্রজননকৃত গাভীসমূহের Standard Database তৈরী হবে ।
Ø অতি স্বল্প সময়ে গাভীর বংশ পরিচয় (pedigree) যাচাই করে নির্দিষ্ট জাতের সিমেন দ্বারা প্রজনন করানো ।
Ø কৃত্রিম প্রজনন সেবা গ্রহণকারী ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক গাভী পালনকারী এবং ডেইরী খামারী যেকোন সময়ে যেকোন স্থানে বসে বা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে (ইউডিসি) গিয়ে নিদির্ষ্ট ওয়েবসাইট থেকে কেবল তাহাঁর মোবাইল নম্বর দিয়ে অল্প খরচে তারঁ প্রজননকৃত গাভীর তথ্য বা বংশ পরিচয় (pedigree) জানতে পারবে।
Ø কৃত্রিম প্রজনন কর্মীর অধিক স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে ।
Ø সেবা গ্রহিতার ভোগান্তি হ্রাস পাবে ।
Ø অতি অল্প সময়ে কৃষকের অধিক উৎপাদনশীল জাতের সৃষ্টিতে অবদান রাখতে পারবে ।
Ø কৃষক কৃত্রিম প্রজননে অধিক উৎসাহী হবে এবং আস্থা ফিরে পাবে ।
Ø গাভী পালনকারী এবং কৃত্রিম প্রজনন কর্মীর মধ্যে নিবিড় যোগসূত্র তৈরি হবে ।
Ø কৃত্রিম প্রজনন কর্মীর কাজ তদারকি করা সহজ হবে এবং অধিক জনবান্ধব হবে ।
সম্ভাব্য ফলাফলঃ
ক) অতি অল্প সময়ে প্রকল্প এলাকার সকল প্রজননকৃত গাভীর তথ্য সমৃদ্ধ Standard Database তৈরী করে অধিক উৎপাদনশীল সংকর জাতের গাভী সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং দুধ ও মাংসের চাহিদা পূরণসহ গুনগত মানম্পন্ন বাছুর উৎপাদন নিশ্চিত হবে ।
খ) Climate Smart Livestock তৈরীর ক্ষেত্রে স্থানীয় লোকাল জার্মপ্লাজম /জেনেটিক মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে ডাটা এনাইলসিস কাজে মেগাসাইজ ডাটার ব্যবহার নিশ্চিত করে দ্রুত সময়ে সঠিকভাবে ভবিষ্যত পরিকল্পণা তৈরী করা সম্ভব হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিন ইউনিয়নের সকল বেসরকারী ও সরকারী এ.আই টেকনিশিয়ানগণ উপস্থিত ছিলেন।