এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একোয়াকালচার বিভাগ দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম খরচে অধিক উৎপাদনশীল রিসারকুলেটিং একোয়াকালচার সিস্টেম (রাস) পদ্ধতির মাছ চাষ ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এ ধরনের আধুনিক মাছ চাষ প্রযুক্তি নিয়ে এটিই প্রথম গবেষণা যেখানে গবেষকগণ আগামী শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশীয় প্রযুক্তিতে যন্ত্রাংশ তৈরি করে কম খরচে আধুনিক মাছ চাষ ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেন।
কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ) এর অর্থায়নে নির্মিত শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা মাঠে স্থাপিত এস এ ইউ-রাস (SAU RAS) নামক নতুন প্রযুক্তিটির প্রকল্পের গবেষণার সমাপনী কর্মশালা বৃহস্পতিবার সকালে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ কামাল ভবনের এএসভিএম সেমিনার রুমে ফিশারিজ, একোয়াকালচার ও মেরিন সাইন্স অনুষদের ডিন, প্রফেসর ড. কাজী আহসান হাবীবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রকল্পের কো-পিআই সৈয়দ মাশেকুল বারী ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্পের পিআই অধ্যাপক ড. এ. এম. সাহাবউদ্দিন।
মাছ চাষের যান্ত্রিকীকরণে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় প্রযুক্তিতে বিদ্যমান সম্পদ ব্যবহার করে কম খরচে আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের উপর বক্তারা আলোচনা করেন।
উক্ত প্রযুক্তি উদ্ভাবন সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রফেসর ড. মো. আব্দুল লতিফ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেজিএফ এর নির্বাহী পরিচালক ড. নাথুরাম সরকার ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ বেলাল হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ আবুল বাশার এবং শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম (সাউরেস) এর পরিচালক অধ্যাপক ড. এফ. এম. আমিনুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে দেশে বিদ্যমান আধুনিক প্রযুক্তিতে মাছ উৎপাদনকারী উদ্যোক্তা, মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, মৎস্য গবেষণা ইনিষ্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকবৃন্দ ও গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রকল্পে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউট সহযোগী সংস্থা হিসেবে সৌর চালিত পাম্প এবং সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করে মাছ চায়ের খরচ কমানোর বিষয়ে কাজ করছে ।
প্রকল্পের পিআই অধ্যাপক ড. এ. এম. সাহাবউদ্দিন জানান, আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর মাছ চাষই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার আমিষের চাহিদা পূরণের প্রধান উপায় হতে পারে। দেশীয় উচ্চ মূল্যের মাছগুলো আধুনিক ও যান্ত্রিক প্রযুক্তি নির্ভর এই সিস্টেমে স্বল্প মূল্যে চাষ করে জৈব নিরাপত্তা বজায় রেখেও অধিক উৎপাদন করা সম্ভব। প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন জনপ্রিয় মাছ যেমনঃ তেলাপিয়া, পাবদা, গুলশা, টেংরা, কোরাল, কুঁচিয়া, শোল, দেশি সরপুঁটি নিয়ে সাফল্য পেয়েছেন বলে গবেষকবৃন্দ উল্লেখ করেন। এই প্রকল্পের আওতায় গবেষণার মাধ্যমে অল্প ব্যয়ে সর্বসাধারণের উপযোগী তেলাপিয়া মাছের জন্য মিনি রাস মডেল তৈরি করা হয় যা প্রান্তিক চাষী এমনকি মহিলাদের পারিবারিক কাজের পাশাপাশি পুষ্টি চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেজিএফ এর নির্বাহী পরিচালক ড. নাথুরাম সরকার বলেন, এই প্রকল্পকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আরো গবেষণা করা প্রয়োজন এবং পরবর্তীতে এটিকে মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণ করতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল লতিফ বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্টিত করার জন্য কৃষি ক্ষেত্রে নতুন নতুন গবেষণা ও আধুনিকায়নের কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশ মাছ চাষে বর্তমানে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে গবেষণার মাধ্যমে মাছ চাষের খরচ কমিয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্দোক্তাদের হাতে তুলে দিতে হবে।