এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খুলনা অঞ্চলের সম্মেলন কক্ষে ‘চলতি বোরো মৌসুমে সার, বীজ এবং সেচ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে খুলনা জেলার কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর সমুহের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে মতবিনিময় ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আজ রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (সম্প্রসারণ অধি শাখা) দীপংকর বিশ্বাস।
সভার শুরুতে প্রধান অতিথি দীপংকর বিশ্বাসকে স্বাগত জানিয়ে কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম খুলনা অঞ্চলের চলতি রবি মৌসুমের গৃহীত কর্মকান্ডের লক্ষ্যমাত্রা ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কৌশলাদি অবহিত করেন। যুগ্ম-সচিব সভায় অংশগ্রহণের আগে দাকোপ উপজেলার পানখালী এলাকায় ‘ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ূ পরিবর্তন অভিযোজন’ প্রকল্পের কার্যক্রম সরেজমিনে পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
যুগ্ম-সচিব দীপংকর বিশ্বাস কৃষি মন্ত্রণালয়ের সকল দপ্তরের কর্মকর্তাদের কৃষকদের চাহিদা মাফিক সেবা নিশ্চিত করার জন্য আহবান জানান। দাকোপ এলাকার রোপা আমন ধানের ফলন সন্তোষজনক উল্লেখ করে যুগ্ম-সচিব বলেন, উফশী ধানের জাত ব্যবহার করে ফলন আরও বৃদ্ধি করতে সব ধরণের প্রযুক্তি যাতে কৃষকরা অনুশীলন করেন তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধান অতিথি দীপংকর বিশ্বাসের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে বিএডিসির যুগ্ম-পরিচালক (সার) কৃষিবিদ মোঃ লিয়াকত আলী জানান, খুলনা অঞ্চলের সার মজুদ পরিস্থিতি সন্তোষজনক রয়েছে। চলমান ডিসেম্বর মাসে বিসিআইসি সার ডিলারগন বরাদ্দের সমুদয় সার উত্তোলন করেছেন।
উপপরিচালক কৃষিবিদ কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন খুলনা জেলায় চলতি রবি মৌসুমে মাঠে বিদ্যমান ফসল ও বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গৃহীত কর্ম কৌশল সভাকে অবহিত করেন। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, খুলনার জেনারেল ম্যানেজার মোঃ জিল্লুর রহমান ফসলের সেচ প্রদানে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন। জিল্লুর রহমান বলেন, উপজেলা সেচ কমিটির অনুমোদন ও সুপারিশনামা পাওয়ার সাথে সাথে সেচ কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হচ্ছে। বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সীর আঞ্চলিক বীজ প্রত্যয়ন অফিসার কৃষিবিদ বিভাস সাহা বলেন, মান সম্মত ফসল বীজ প্রাপ্তিতে করণীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
সহকারী আঞ্চলিক বীজ প্রত্যয়ন অফিসার কৃষিবিদ ড. রুবায়েত আরা মানসম্মত তরমুজ বীজসহ অন্যান্য ফসলের বীজ চাষিরা যাতে সুলভ মূল্যে পেতে পারেন সেজন্য বাজার মনিটরিংয়ে উপজেলা কৃষি অফিসারদের সম্পৃক্ততা জরুরী বলে জানান। বিএডিসি’র সেচ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষিবিদ জামাল ফারুক বলেন, ডুমুরিয়া এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ভোলা ও পটুয়াখালী হতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেচ যন্ত্র এনে পানি নিস্কাশন করা হচ্ছে। সেচ যন্ত্রগুলো ডুমুরিয়া উপজেলার বোরো ধান আবাদ অর্জনে বিশেষ কার্যকরী হচ্ছে বলে জামাল ফারুক জানান।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী জলাবদ্ধতা নিরসনে শীঘ্রই প্রায় ১৫ কিলোমিটার খাল ড্রেজিং হরার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুস সালাম জানান, খুলনায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি জনগনের ক্রয় সীমার মধ্যে রয়েছে। খুলনা শহরের বিভিন্ন বাজারে স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে সুলভ মূল্যে মানসম্মত নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল সরবরাহ করা হয়েছে। জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার কৃষিবিদ মহাদেব সাহা তরমুজ ফসলে সেচ সহায়তার জন্য কৃষকদের ফিতা পাইপ সহায়তা দেয়ার জন্য প্রস্তাব করেন।
সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার কৃষিবিদ ড. এস এম ফেরদৌস সভাকে জানান, দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকার ৫টি জেলার ১২টি উপজেলায় ৮০টি ছোট ছোট মাইক্রো-ওয়াটারসেড পুনঃখনন করে ভুপরিস্থ পানি জমা করে ফসলে সেচ প্রদান নিশ্চিত করার জন্য সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া সহযোগী সংস্থা উত্তরণ ও জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন কৃষকদের সংগঠিত করছে। প্রস্তাবিত এসব মাইক্রো-ওয়াটারসেড পুনঃখননের অনুমতি প্রাপ্তিতে প্রশাসনিক সহায়তার দেয়ার জন্য যুগ্ম-সচিব দীপংকর বিশ্বাসের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
অন্যন্যের মধ্যে বারি’র বিজ্ঞানী কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম, বিএডিসি’র কৃষিবিদ দীপংকর রায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষিবিদ সুবীর কুমার বিশ্বাস, কৃষিবিদ মিজান মাহমুদ,কৃষিবিদ ফজলুর হক মনি, কৃষিবিদ ইনসাদ ইবনে আমিন, কৃষিবিদ মোঃ কিশোর আহমেদ প্রমুখ আলোচনায় অংশগ্রহণ করে মাঠে বিদ্যমান ফসলের অবস্থা সভাকে অবহিত করেন।