কোস্ট ফাউন্ডেশন কর্তৃক লাইভস্টক সার্ভিস প্রভাইডারদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: পিকেএসএফ এর আর্থিক সহায়তায় কোস্ট ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত আরএমটিপি সেইফ পোল্ট্রি প্রকল্পের আওতাধীন অন্যতম কার্যক্রম লাইভস্টক সার্ভিস প্রভাইডারদের প্রশিক্ষণটি আজ মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) প্রথম ব্যাচ এর প্রথম ধাপ- বিজনেস মডেল/প্লান ডেভলপমেন্ট এবং ব্যবসা ব্যবস্থাপনা শুরু হয়েছে।

উক্ত প্রশিক্ষণে লাইভস্টক সার্ভিস প্রভাইডাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণে রিসোর্চ পারসন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব শেখ দিদারুল আলম, সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, কক্সবাজার সরকারি কলেজ। প্রশিক্ষণের শুরুতে প্রকল্প ব্যবস্থাপক কৃষিবিদ মোঃ নুরে আলম, নিরাপদ পোল্ট্রি ও পোলট্রি জাত পণ্যের বাজারজাতকরণে কোস্ট ফাউন্ডেশন এর কার্যক্রম সমূহ সংক্ষেপে বর্ণনা করেন। প্রকল্পটি কক্সবাজারের সদর ও রামু উপজেলায় পরিচালিত হচ্ছে।

প্রশিক্ষণের মূল আলোচ্য বিষয় সমূহ :-
- পোলট্রি ব্যবসায় পরিকল্পনা কী এবং পোলট্রি ব্যবসায় পরিকল্পনার মূল উপাদানসমূহ।
- পোলট্রি ব্যবসায় পরিকল্পনার উদ্দেশ্য।
- পোলট্রি ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা কি? বিশ্লেষণ।
- একটি পোল্ট্রি ব্যবসায় কিভাবে ডিল করবেন?
- পোলট্রি ব্যবসায় কিভাবে মার্কেট চাহিদা সৃষ্টি করবেন? একটি পর্যালোচনা।
- কিভাবে একটি বাজারে প্রচলিত পোল্ট্রি পণ্যের সাথে - আপনি অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন করবেন?
- মার্কেটিং বিষয়ে কিছু মৌলিক ও আধুনিক আপডেট।

পোলট্রি ব্যবসায় পরিকল্পনার মূল উপাদান:-

- এক্সিকিউটিভ সারাংশ (Executive Summary
-বাজার গবেষণা (Market Research)
- সংগঠন এবং ব্যবস্থাপনা (Organization and Management)
- বিপণন এবং বিক্রয় কৌশল (Marketing and Sales Strategy)
- আর্থিক পরিকল্পনা (Financial Plan)
- ঝুঁকি এবং চ্যালেঞ্জ (Risks and Challenges)

পোলট্রি ব্যবসায় কিভাবে মার্কেট চাহিদা সৃষ্টি করবেন?:-

* পোলট্রি ব্যবসায় মার্কেট চাহিদা সৃষ্টি বা ডিমান্ড ক্রিয়েশন একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং চ্যালেঞ্জিং কাজ। সঠিক কৌশল এবং পরিকল্পনার মাধ্যমে আপনি গ্রাহকদের মধ্যে চাহিদা তৈরি করতে পারেন, যা ব্যবসার সাফল্য নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। পোলট্রি পণ্য (যেমন ডিম, মাংস, মুরগি) বাজারে চাহিদা বাড়ানোর জন্য আপনাকে কয়েকটি কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।

১. গুণগত মান নিশ্চিত করা
উচ্চ গুণমানের পণ্য উৎপাদন:গ্রাহকরা আপনার পণ্য যদি সুস্বাদু, নিরাপদ, এবং পুষ্টিকর মনে করেন, তবে তারা পুনরায় আপনার কাছ থেকে কিনবে।
অর্গানিক বা স্বাস্থ্যকর পণ্য: অর্গানিক পোলট্রি পণ্য বা হালাল মাংস/ডিম উৎপাদন করতে পারেন।

২. গ্রাহকদের চাহিদা এবং বাজার বিশ্লেষণ
বাজার গবেষণা: আপনার লক্ষ্যমাত্রা বাজারে গ্রাহকদের পছন্দ এবং চাহিদা বুঝে নেওয়া জরুরি।
গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া: আপনার পণ্য সম্পর্কিত গ্রাহকদের মতামত এবং পর্যালোচনা সংগ্রহ করুন।

৩. বিপণন কৌশল তৈরি করা
ব্র্যান্ডিং এবং পণ্যের প্রচার: পোলট্রি পণ্যের জন্য একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড তৈরি করুন। যেমন, প্যাকেজিং ডিজাইন, নাম, লোগো ইত্যাদি।
সামাজিক মিডিয়া ও ডিজিটাল মার্কেটিং: সোশ্যাল মিডিয়া (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার) এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলির মাধ্যমে আপনার পণ্যের প্রচার করুন।
বিজ্ঞাপন এবং প্রচারণা: প্রচারণা চালান। আপনি বিশেষ ছাড় বা উপহার দিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে পারেন।

৪. সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং সচেতনতা সৃষ্টি করা
স্বাস্থ্য সচেতনতা: গ্রাহকদের পোলট্রি পণ্যের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে সচেতন করতে পারেন।
এথিক্যাল পোলট্রি প্রাকটিস: আপনি স্বাস্থ্যকর এবং নৈতিকভাবে পালন করা মুরগির পণ্য বিক্রি করেন, তবে গ্রাহকদের জানান।

৫. উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণ
প্রতিযোগিতামূলক মূল্য: সঠিক মূল্য নির্ধারণ করতে বাজারের পরিস্থিতি, প্রতিযোগিতামূলক মূল্য, এবং উৎপাদন খরচের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ব্রান্ড অনুযায়ী মূল্য: উচ্চ গুণমানের পণ্য বা অর্গানিক পণ্য বিক্রি করলে আপনি কিছুটা উচ্চ মূল্য রাখতে পারেন, কারণ ক্রেতারা ভালো পণ্যের জন্য বেশি মূল্য দিতে প্রস্তুত থাকে।

৬. নতুন পণ্য বা বৈচিত্র্য সৃষ্টি
নতুন পণ্য লঞ্চ: বৈচিত্র্য আনলে চাহিদা বৃদ্ধি পেতে পারে। যেমন, ডিমের , পোলট্রি মাংসের অথবা স্পেশাল পণ্য (যেমন, হালাল মাংস, এন্টিবায়োটিক মুক্ত মাংস) ভিন্ন ধরনের প্যাকেজিং (বড়, ছোট, অর্গানিক।
নতুন উৎপাদন কৌশল: আপনি মুরগি পালন এবং ডিম উৎপাদনের নতুন কৌশল ব্যবহার করতে পারেন, যা খরচ কমানোর পাশাপাশি পণ্যের গুণমান উন্নত করবে।

৭. ডিলার এবং খুচরা বিক্রেতার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা
বিক্রয় চ্যানেল বিস্তৃত করা: ডিলার এবং খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে স্থানীয় দোকান, সুপার মার্কেট এবং বড় রিটেইলারদের কাছে আপনার পণ্য পৌঁছে দিতে পারেন।
সরাসরি বিক্রয়: আপনি যদি সরাসরি গ্রাহকদের কাছে পণ্য বিক্রি করতে চান, তাহলে স্থানীয় বাজার, ফার্মস এবং মেলার মাধ্যমে আপনার পণ্য বিক্রির প্রচেষ্টা করতে পারেন।

৮. নতুন প্রযুক্তি ও অনলাইন বিক্রয় প্ল্যাটফর্ম
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম: বর্তমানে অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলির মাধ্যমে আপনি ই-কমার্স সাইট বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আপনার পণ্য গ্রাহকদের কাছে সরাসরি পৌঁছাতে পারেন।
পণ্য ডেলিভারি সেবা: যদি আপনি ডেলিভারি পরিষেবা শুরু করেন, তাহলে গ্রাহকরা আপনার পণ্য সহজেই তাদের বাড়িতে পৌঁছাতে পারবেন।

৯. বিশ্বস্ত গ্রাহক তৈরি করা
গ্রাহক সম্পর্ক উন্নয়ন: একটি দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক তৈরি করুন এবং গ্রাহকদের কাছ থেকে পুনরায় অর্ডার পাওয়ার জন্য তাদের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করুন।
বিশ্বস্ত গ্রাহকদের পুরস্কৃত করা: আপনার বিশ্বস্ত গ্রাহকদের জন্য পুরস্কার বা ছাড়ের ব্যবস্থা করুন।

১০. উৎপাদন পরিসরের উন্নয়ন
উৎপাদন বৃদ্ধি: আপনার খামারের উৎপাদন পরিসর বাড়িয়ে পোলট্রি পণ্যের চাহিদা পূরণ করুন।
বিশেষ সিজনাল অফার: সিজনাল অফার বা ছুটির সময় বিশেষ ডিসকাউন্ট দিয়ে পণ্যের চাহিদা তৈরি করুন।

প্রশিক্ষণটির শেষে আশা করা যাচ্ছে, ব্যবসা করার ক্ষেত্রে এলএসপিরা আরো বেশি দক্ষ হবেন। নিরাপদ পণ্য উৎপাদনে আরো আগ্রহী হবেন। তাদের মোট ইনকাম মার্জিন আরো বাড়বে। ব্যবসায় নতুনত্ব আসবে। সর্বোপরি উৎপাদন বাড়বে।