বাকৃবি উদ্ভাবিত সংকর ছাগলে দ্বিগুণ লাভ

বাকৃবি প্রতিনিধি: গরম ভাতের সঙ্গে এক টুকরো মাংস খাওয়ার আনন্দ কে না উপভোগ করে! আর সেটা যদি হয় ছাগলের মাংস, তাহলে তো কথাই নেই। ছাগলের লাল মাংসের স্বাদ ও গন্ধ অতুলনীয়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ায় উৎসব-পার্বণে ছাগলের মাংসের চাহিদার বিকল্প নেই । আমা‌দের দে‌শে ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল দিয়ে বেশিরভাগ চাহিদা পূরণ করা হয়। তবে আকারে ছোট এই ছাগল বছরে মাত্র ৮-১০ কেজি মাংস উৎপাদন করে, যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। উৎপাদন খরচও বে‌শি।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষক দল এই সংকট মোকাবিলায় বোয়ার জাতের পাঠার সঙ্গে দেশীয় ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগীর সংকরায়নের মাধ্যমে একটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে। নতুন এই সংকর জাত ব্ল‌্যাক বেঙ্গ‌লের সমপরিমাণ খাবারে দ্বিগুণ মাংস উৎপাদনে সক্ষম। পুরুষ ছাগল বছরে ২৬ কেজি এবং মাদি ছাগল ২৩ কেজি মাংস উৎপাদন করতে পারে। এ জাতটি রোগ প্রতিরোধী এবং ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মতোই সহজে পালনযোগ্য। নতুন জাতের ছাগল দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয়, কারণ এর চামড়ার রঙ সাদা-কালো। এ জাতের বাচ্চার জন্মের সময় গড় ওজন প্রায় ২ কেজি, যেখানে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বাচ্চার গড় ওজন মাত্র ৮০০ গ্রাম।

বাকৃবির পশুপালন অনুষদের পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন এবং তার সহযোগী গবেষক স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ এই জাতটি উদ্ভাবন করেছেন। ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় গবেষণার মাধ্যমে এর কার্যকারিতা যাচাই করা হয়। ফলাফল ছিল সন্তোষজনক।

অধ‌্যাপক রুহুল আ‌মিন জানান, এই গবেষণার মূল লক্ষ‌ কম খর‌চে মাংষ উৎপাদন করা। কৃষক‌কে দ্বিগুণ লাভবান করা। কিন্তু প্রজন‌নের উ‌দ্দে‌শ্যে নয়। গ‌বেষণায় দেখা গে‌ছে সংকরের স্ত্রী বাচ্চাদের প্রজ‌নেন আস‌তে ১ বছর বয়সে বে‌শি সময় লা‌গে । অন্যদিকে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগীর ৬-৭ মাসেই প্রথম গর্ভধারণ করে। কৃষক‌কে লাভবান এবং মাং‌সের চাহিদা পূর‌ণে জাতীয় প্রজনন নীতিমালায় সহজ করার দা‌বি জানান।

বোয়ার জাতের ছাগল যার উৎপত্তি দক্ষিণ আফ্রিকায় । যা বছরে সর্বোচ্চ ৭০ কেজি মাংস উৎপাদনে সক্ষম। ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের কারণে এ জাতের ছাগল পরজীবী ও অনুজীবের প্রতি সংবেদনশীল হওয়ায় আমা‌দের দে‌শের সা‌থে মাননসই নয়।

সহকারী গবেষক খালিদ সাইফুল্লাহ জানান, “আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে কম খরচে ভোক্তার কাছে গুণগত মাংস পৌঁছে দেওয়া। খামারিরা এ জাত পালন করে বছরে প্রায় দ্বিগুণ মুনাফা করতে পারেন। কারণ একই পরিমাণ খাবার ও পরিচর্চার মাধ্যমে দ্বিগুণ মাংস পাওয়া যায় বোয়ার ও ব্ল্যাক বেঙ্গলের সংকর জাত থেকে। মাঠ পর্যায়ের গবেষণায়ও আমরা কাঙ্খিত ফলাফল পেয়েছি।