বাকৃবি প্রতিনিধি: মূলার মতো দেখতে টেবিলের উপর রাখা বিটরুটের এক টুকরো স্বাদ নিতে গিয়েই অবাক এক শিক্ষার্থী! সুস্বাদু এই বিটরুটের আরেক টুকরো নিতে হম্বিতম্বি শুরু করলেন। এটি শুধু স্বাদে নয় পুষ্টি গুণেও ভরপুর।
সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি অনুষদের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের গবেষকরা এই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ বিটরুটের নতুন চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবনে সাফল্য অর্জন করেছেন। নতুন এই পদ্ধতিতে কম খরচে বীজ রোপনের ৫৫ দিন পর প্রতি হেক্টরে ২৫ টন ফলন পাওয়া সম্ভব। এটি শীতকালীন ফসল হলেও আমন ধান কাটার পর বোরো ধান রোপণের আগেও পতিত জমিতে অল্প সময়ে এটি চাষ করা যায়।
এই গবেষণার প্রধান ছিলেন বাকৃবির কৃষি অনুষদের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান এবং সহযোগী গবেষক হিসেবে ছিলেন ওই অনুষদের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী ইফরান আল রাফি। বাকৃবি রিসার্চ সিস্টেম (বাউরেস) এর 'জৈব, অজৈব সার এবং মালচিংয়ে বিটরুটের ফলন এবং গুণগত মানের উপর প্রভাব' শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় গবেষণাটি পরিচালিত হয়। গতবছর অক্টোবর মাস থেকে এই গবেষণার কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমান এটি পরমাণু পর্যায়ে বিটরুটের পুষ্টিগুণ নিয়েও গবেষণা চলমান রয়েছে ।
অধ্যাপক হাবিবুর রহমান জানান, বিটরুট একটি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ও ভেষজ ফসল। আমাদের দেশে এর চাষ কিছুটা কম হলেও উন্নত দেশগুলোতে এটি ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়। বিটরুটে রয়েছে অ্যান্থোসায়ানিন, বিটাক্যারোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো উপাদান। যা ক্যান্সার কোষ ধ্বংসে সহায়ক। এছাড়া ফ্যাটি লিভার, উচ্চ রক্তচাপ ও কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভবিষ্যতে বিটরুট দেশের পুষ্টি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
গবেষকরা আরো জানান, এই গবেষণার জন্য দুইটি পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। একটি হলো অজৈব সার এবং মালচিং পদ্ধতি , অপরটি জৈব, অজৈব সার এবং মালচিং সমন্বিত পদ্ধতি। এখানে মালচিং হিসাবে কালো পলিথিন, অব্যবহৃত কচুরিপানা ও খড় ব্যবহারে করা হয়েছে। তবে জৈব, অজৈব এবং মালচিং সমন্বিত পদ্ধতিতে ফলন বেশি পেয়েছি। এর অন্যতম কারণ এই পদ্ধতিতে চাষের ফলে মাটির আদ্রর্তা ও পুষ্টি গুণাগুণ সংরক্ষিত থাকে। ফলে ফসলের উৎপাদন ও গুনগত মান বৃদ্ধি পায় এবং খরচ কমায়। এই পদ্ধতিতে চাষের জন্য প্রতি হেক্টরে ইউরিয়া ২৫০ কেজি, টিএসপি ৩৩৩ কেজি, এমওপি ২৫০ কেজি, বোরন ২ কেজি, গোবর ১০ টন, এবং ভার্মিকম্পোস্ট ১০ টন ব্যবহার করা হয়েছে।
স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী ইফরান আল রাফি জানান, বিটরুট পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ অত্যন্ত সম্ভাবনাময় স্বল্পমেয়াদী একটি ফসল। এই গবেষনার মূল লক্ষ্য ছিল কৃষকের জন্য সহজ ও লাভজনক চাষাবাদ পদ্ধতি এবং বিটরুটের পুষ্টি গুনাগুণ পরীক্ষার মাধ্যমে বের করা।
এছাড়া, এই সবজির বাজারমূল্য ভালো থাকায় কৃষকরা এটি চাষ করে লাভবান হতে পারেন। তবে, নতুন ফসল হওয়ায় অনেকে এটি চাষে অভ্যস্ত নয়। এটি চাষের জন্য তাদের আগ্রহী করে তুলতে হবে এবং উৎপাদন কৌশল সর্ম্পকে সচেতনা বাড়তে হবে।