বিশ্ব দুগ্ধ দিবস: পুষ্টি, অর্থনীতি ও যুবশক্তির হাতিয়ার

রোটারিয়ান ড. মো. হেমায়েতুল ইসলাম আরিফঃ প্রতি বছর ১ জুন বিশ্ব দুগ্ধ দিবস পালিত হয়, যার সূচনা ২০০১ সালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) হাত ধরে। বাংলাদেশে এই দিবস কেবল পুষ্টি সচেতনতা নয়, বরং গ্রামীণ অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শারীরিক-মানসিক বিকাশের মৌলিক স্তম্ভ হিসেবে কাজ করে। ২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য "দুগ্ধের শক্তি উদযাপন" (Celebrating the Power of Dairy) বাংলাদেশের যুব সমাজের জন্য একটি রোডম্যাপ তুলে ধরে।

দুধ: প্রকৃতির সাদা সোনা
দুধকে প্রকৃতির "সর্বোৎকৃষ্ট সাদা সোনা" বলা হয়। প্রতি ১০০ মিলি গরুর দুধে রয়েছে ৩-৩.৫ গ্রাম প্রোটিন, ১২০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ৪০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ, যা হাড়, দাঁত, মাংসপেশি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। WHO-এর গবেষণা অনুযায়ী, নিয়মিত দুধপান শিশুদের স্টান্টিং ঝুঁকি ১৫-২০% কমায়।

বাংলাদেশে দুগ্ধ খাতের চিত্র
বাংলাদেশের ডেয়ারি সেক্টরে ৪৮% মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত (FAO)। মিল্ক ভিটা, ব্র্যাক ডেইরি, আড়ং এবং প্রাণের মতো প্রতিষ্ঠান শহুরে চাহিদার ৮০% মেটালেও এখনও চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে:
-মাথাপিছু উৎপাদন দিনে মাত্র ১৫৫ মিলি (FAO-এর সুপারিশ ২৫০ মিলি)।
-গুণগত মান : অপরিশোধিত দুধে পানি বা ইউরিয়া মিশ্রণের ঝুঁকি।
-মূল্য সহনীয়তা : নিম্নআয়ের পরিবারের জন্য দুধ এখনও "বিলাসী পণ্য"।

যুব সমাজের টেকসই ভবিষ্যৎ
-দুধ শুধু শারীরিক শক্তি বাড়ায় না, সামাজিক সমস্যা সমাধানেও ভূমিকা রাখে:
-কিশোর-কিশোরীদের দৈনিক ৫০০ মিলি দুধপান হাড়ের ঘনত্ব ৩০% বাড়ায় এবং এনিমিয়া ঝুঁকি ২৫% কমায়।
-মাদকের বিকল্প হিসেবে প্রোটিনসমৃদ্ধ দুধকে উৎসাহিত করা যেতে পারে।

রোডম্যাপ: টেকসই উন্নয়নের জন্য
১. জাতীয় দুগ্ধ নীতিমালা: দুধকে "অত্যাবশ্যক পণ্য" তালিকাভুক্ত করে ভ্যাট কমানো।
২. যুব উদ্যোক্তা তৈরী: ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে দুধ বিপণনের সুযোগ বাড়ানো।
৩. বিজ্ঞানসম্মত প্রাণিপালন: কৃত্রিম প্রজনন ও টিকা কার্যক্রম সম্প্রসারণ।
৪. সচেতনতা: "এক গ্লাস দুধ, সুস্থ জীবনের অধিকার" ক্যাম্পেইন চালু করা।

২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রতিটি শিশুর হাতে প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য জরুরি। আসুন কোমল পানীয়ের পরিবর্তে দুধকে প্রাধান্য দিয়ে একটি সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলি।

"কেউ দুধ বেচে মদ খায়, কেউ মদ বেচে দুধ খায় — সিদ্ধান্ত আপনার!"

তথ্যসূত্র:
FAO Country Report: Bangladesh Dairy Sector (2025)
Bangladesh National Nutrition Council (BNNC)
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২৪
World Health Organization (WHO) Guidelines on Nutrition

লেখক:ডেপুটি চিফ ভেটেরিনারি অফিসার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।