বাবা দিবস ২০২৫: পিতৃত্বের গৌরব ও ভালোবাসার উৎসব

রোটারিয়ান ড. মো. হেমায়েতুল ইসলাম আরিফ:
ঐতিহাসিক পটভূমি
বাবা দিবসের সূচনা ১৯১০ সালে আমেরিকায় হয়, এবং সোনোরা স্মার্ট ডড তার পিতার সম্মানে এই দিনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সোনোরা তার গৃহযুদ্ধ-বীর পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ও তাঁর অবদানকে স্মরণ করতে ১৫ জুন এই দিনটিকে বেছে নিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতি নিকসন এটিকে জাতীয় স্বীকৃতি দিলে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশে ২০০০ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে এই উৎসব।

উদযাপনের রীতি
১. পারিবারিক সম্মিলন:
• সন্তানরা বাবাকে নিয়ে রেস্তোরাঁ, পার্ক বা বাড়িতে বিশেষ আয়োজন করে।
• "বাবা, তোমাকে ভালোবাসি" লেখা কার্ড, ফুল বা হ্যান্ডমেড উপহার দেওয়া হয়।

২. শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম:
• স্কুল-কলেজে চিত্রাঙ্কন, রচনা ও আলোচনা সভা ("আমার বাবা" বিষয়ক)।
• সোস্যাল মিডিয়ায় #বাবা_দিবস_২০২৫ ট্রেন্ড করে শ্রদ্ধা নিবেদন।

৩. সামাজিক উদ্যোগ:
• এতিমখানা ও বৃদ্ধাশ্রমে বাবাদের সম্মাননা ও উপহার বিতরণ।
• মেডিকেল ক্যাম্প (বয়স্ক পিতাদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা)।

২০২৫-এর বিশেষত্ব
• বাংলাদেশের ৫০টি জেলায় "শ্রেষ্ঠ বাবা" পুরস্কারের আয়োজন।
• শিশুদের আঁকা "বাবার প্রতিকৃতি" প্রদর্শনী (জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা)।
• টেলিভিশনে বিশেষ নাটক : "পিতার ছায়া" (ঢাকা মেট্রো থিয়েটার প্রযোজনা)।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট: ভালোবাসার অনন্য অভিব্যক্তি
"বাংলাদেশে আমরা মুখে 'বাবা, তোমাকে ভালোবাসি' বলতে সংকোচ বোধ করি, কিন্তু এই নিরব ভালোবাসার গভীরতা বিশ্বের কোথাও নেই।"

আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ পায়:
• কর্মের মাধ্যমে: বাবার পায়ের ধুলো নিয়েই কর্মক্ষেত্রে যাওয়া
• দায়িত্ববোধে: বাবার অসুস্থতায় রাতজাগা সেবা করা আথবা ঈদের নামাজের পর বাবার কবরস্থানে পিতৃমুক্তির প্রার্থনা করা
• সম্মানে: পরিবারের সিদ্ধান্তে বাবার মতামতের প্রাধান্য দেওয়া
• অর্থে: প্রথম বেতনে বাবার জন্য জুতো/ কোন কিছু কিনে দেওয়া

২০২৫-এ এই ভালোবাসার প্রকাশ হবে:
• গ্রামীণ পর্যায়ে "বাবা-মেয়ে হাঁটাহাঁটি" কর্মসূচি (ডায়াবেটিস সচেতনতা)
• শহুরে তরুণদের "বাবার জীবনকথা" ডকুমেন্টারি প্রজেক্ট
• মসজিদে বিশেষ দোয়া: ঈদের পর প্রথম জুমাতে পিতৃমুক্তির প্রার্থনা

বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ
"বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় বাংলাদেশের পিতারা সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেন সন্তানের শিক্ষার জন্য"

আমাদের ভালোবাসার বৈশিষ্ট্য:
• নিঃশর্ততা: বাবা কখনও হিসাব করেন না কত টাকা খরচ হলো
• ধৈর্য: সন্তানের ভুলে কখনও সম্পর্ক ছেদ নয়
• নিরন্তর দোয়া: প্রতিটি প্রার্থনায় সন্তানের কল্যাণ কামনা

উপসংহার:বাবা দিবস কেবল একটি তারিখ নয়, এটি পিতৃত্বের নিঃশর্ত ভালোবাসার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর মহিমান্বিত ক্ষণ। ২০২৫-এ এসেও যেন আমরা বলতে পারি:
"বাবা, তোমার অবদান ভোলার নয়।
এই জীবন, এই শিক্ষা, এই মূল্যবোধ—
সবই তোমার দেওয়া অমূল্য সম্পদ।
তোমার এই নিরব ভালোবাসাই
আমাদের শক্তি, আমাদের অহংকার।" অথাবা সেই বিক্ষাত গানের মত কাটেনা সময় যেন……