এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: Local Cattle Germplasm Improvement: Challenges and Way Forward শীর্ষক দিনব্যাপী এক সেমিনার ১৩ মে ২০২৫ তারিখ ঢাকাস্থ খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনষ্টিটিউশন (কেআইবি)- এ অনুষ্ঠিত হয়। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কৃত্রিম প্রজনন বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত উক্ত সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা, ফরিদা আক্তার।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশের প্রথিতযশা এনিমেল ব্রিডিং বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, জনাব নিলুফা আক্তার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাসহ বেসরকারি খাতের স্টেকহোল্ডারগণ, বিভ্ন্নি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি গণ, দেশের বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত এনিমেল ব্রিডিং বিশেষজ্ঞগণ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বিভাগীয় ও অন্যান্য পরিচালকবৃন্দ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরাধীন ৬৪ জেলা থেকে আগত উপপরিচালক ও জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে আগত গবেষকবৃন্দ, প্রান্তিক খামারী ও বিভিন্ন প্রিন্ট - ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিগণ সহ মোট প্রায় ৩০০ জন উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে keynote paper present করেন ড. মোঃ সফিকুর রহমান (শশী), উপপরিচালক, কৃত্রিম প্রজনন দপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
Local Cattle Germplasm Improvement: Challenges and Way Forward শীর্ষক সেমিনারটির মাধ্যমে আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে একটি টেকসই দেশীয় গরুর উন্নত জাত তৈরীর রোডম্যাপ ও বাস্তবায়ন কৌশল তুলে ধরা হয়। জানা যায়, বিগত ৫০ বছরে হলষ্টিন ফ্রিজিয়ান জাতের সিমেন দিয়ে ক্রসব্রিডিং এর মাধ্যমে বর্তমানে দুধের উৎপাদন প্রায় ১৫গুন বৃদ্ধি পেয়েছে ও মাংস উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পুর্ণ হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ক্রস গাভীর এই উৎপাদন ক্ষমতা নানা কারনে টেকসই হচ্ছে না। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পরিবেশের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বিদেশী জাতের রক্ত সমৃদ্ধ ক্রস গরুর তাপ সহনশীলতার বৈশিষ্ট্য না থাকার কানে উৎপাদন ধরে রাখা যাচ্ছে না, এমনকি নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়াও বিদেশি জাতের গরুগুলো উচ্চ উৎপাদনশীল হলেও বাংলাদেশের পরিবেশে অনেক সময় মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে। তাদের মধ্যে তাপজনিত রোগের প্রবণতা বেশি হওয়ায় খাদ্য গ্রহন ক্ষমতা কমে যায়। ফলে উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায় এবং চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যায়।
সেমিনারটির উপস্থাপনা থেকে জানা যায়, আমাদের দেশের জনগণ এমন একটি গরু চায় যার- বৈশিষ্ট্যগুলো হবে-
"ছোট আকৃতির, লাল রঙের, রোগ প্রতিরোধী, তাপ সহনশীল, কম খাদ্যে বেড়ে ওঠা, জলবায়ু সহনশীল গরু, যা প্রতি বছর বাচ্চা দেয়, দীর্ঘজীবী, দিনে ৮ লিটার দুধ দেয় এবং কোরবানির ঈদে ভালো দামে বিক্রি হয়।যদিও একটি গরুর মধ্যে এতগুলো ভালো বৈশিষ্ট্য পাওয়া কঠিন কিন্তু সেমিনারের পেপার থেকে দেখা যায় দেশীয় জাতের আরসিসি, মীরকাদিম বা ধবলগরু বা হাসা, পাবনা, নর্থ বেঙ্গল গ্রে ও হিলব্লাক নেত্রকোনার মত অনেক গরুর এই বৈশিষ্ট্য গুলো বিদ্যমান আছে।
সেমিনারের পেপার থেকে আরও জানা যায় দেশী গরুর জেনেটিক মান বহুগুনের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও সঠিক পরিকল্পনা ও গাইডলাইনের অভাবে নিম্ন লিখিত কারনে এগুলোকে উন্নত করা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় জাতের গরুর জেনেটিক্স উন্নয়নে ইতোপুর্বে নেয়া সকল কর্মসুচী ছিল খুবই সীমিত পরিসরে। যে কারনে ক্ষুদ্র খামারীগণের মধ্যে স্থানীয় গরু পালন করতে গিয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। অপরদিকে ক্রসব্রিড গরুগুলোতেও উচ্চ জেনেটিক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবসহ নানাবিধ কারনে উৎপাদনশীলতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করা সম্ভব হচ্ছে না।
কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় প্রানিসম্পদের অবদান অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা, সুষম পুষ্টি, বেকার সমস্যার সমাধান ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ণ, কৃষি জমির উর্বরতা বৃদ্ধি, মেধা সম্পন্ন জাতি গঠন ও বৈদেশিক আমদানি নির্ভরতা হ্রাসে প্রাণিসম্পদের ভূমিকা অপরিসীম। বর্তমানে এই খাতে জিডিপিতে অবদান ১.৮৫% এবং প্রবৃদ্ধি ৩.২৩%।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মোতাবেক দেশে ২৪৮.৫৬ লাখ গরু রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় ৫-১০% গরু Pastured based free grazing system এ coastal এবং forest area তে পালন করা হয় যার অধিকাংশই দেশী জাতের গরু।
৯০-৯৫% গরু লালন পালন করা হয় Semi intensive management system এ। যেটা Backyard farming system or scavenging system নামেও পরিচিত। এ পদ্ধতিতে অধিকাংশ দেশীয় জাতের গরু এবং কিছু ক্রসব্রিড পালন করা হয়
অন্যদিকে Commercial farming system এ ক্রসব্রিড বা হাইব্রিড গরু পালন করা হয়। যেখানে আমদানি করা হয় genotypes, feeds এবং medicine। অথচ বাংলাদেশ Domestic animal genetic resource এ সমৃদ্ধ একটি দেশ। গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, মুরগি কবুতর, হাস, কোয়েল, হরিণ, গয়াল প্রভৃতি প্রজাতির রয়েছে তাদের নিজস্ব স্বাতন্ত্রতা।
অংশগ্রহনকারী বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, স্থানীয় গরুর জিনগত বৈচিত্র্য আমাদের একটি জিন ব্যাংক বা জিনগত সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। এই জিনগত বৈশিষ্ট্যগুলো ভবিষ্যতের গবাদিপশু উন্নয়নে, বিশেষ করে "তাপ সহনশীল, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী, প্রতিবছর বাচ্চা দেওয়ার প্রবনতা থাকে ও যে কোন ধকল সহ্য করেও উৎপাদনশীল ঠিক রাখতে এজন্য প্রয়োজন একটি সমন্বিত প্রজনন কৌশল, রোডম্যাপ ও এ্যাকশন প্লান, যেখানে স্থানীয় জাতকে সংরক্ষণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রজননের উপযোগী জাত উন্নয়ন করতে হবে।
এই সেমিনারের মাধ্যমে বিজ্ঞানি, প্রান্তিক খামারি, বাণিজ্যিক খামারি, সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সকলের মতামতের মাধ্যমে দেশি জাত সংরক্ষণ এবং উন্নয়নে একটি সঠিক দিক নির্দেশনা আসবে বলে সকলের প্রত্যাশা।