
ইসলামিক ডেস্ক: পবিত্র কোরআনের সূরা আল-আহযাবের ৩৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও মর্যাদাপূর্ণ ভাষায় পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য সমানভাবে কিছু মৌলিক গুণ ও কর্তব্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইমানদার জীবনের যে মানদণ্ড তুলে ধরেছেন, তা কোনো লিঙ্গভিত্তিক নয়; বরং তাকওয়া, চরিত্র ও আমলের ভিত্তিতেই মানুষের মর্যাদা নির্ধারিত হয় এই চিরসত্যকে আবারও সুদৃঢ় করেছেন।
এই আয়াত অনুযায়ী, আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য বান্দা তারা যারা আল্লাহর কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণকারী, মুমিন, অনুগত, সত্যবাদী, ধৈর্যশীল, বিনয়ী ও অবনত; যারা আল্লাহর পথে দান করে, সিয়াম পালন করে, নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে এবং সর্বদা আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে। এখানে পুরুষ ও নারীকে আলাদা করে নয়, বরং পাশাপাশি উল্লেখ করে মহান আল্লাহ স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে নৈতিকতা, ইবাদত ও আত্মশুদ্ধির পথে উভয়ের দায়িত্ব ও সুযোগ সমান।
এই সব গুণে গুণান্বিত হওয়ার বিনিময়ে মহান রাব্বুল আলামিন তাদের জন্য যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা অত্যন্ত সম্মানজনক—**ক্ষমা ও মহান পুরস্কার**। অর্থাৎ, ইহকালের পাপ থেকে মুক্তি এবং পরকালের চিরস্থায়ী সফলতা। এটি শুধু ব্যক্তিগত নাজাতের বার্তা নয়; বরং পরিবারকে শান্তিময়, সমাজকে নৈতিক এবং রাষ্ট্রকে ন্যায়ভিত্তিক করার একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা।
ইসলাম আমাদের শেখায় পরিবার গঠনের মূল ভিত্তি হলো তাকওয়া ও চরিত্র। যখন পুরুষ ও নারী উভয়ই ইমান, ধৈর্য, লজ্জাশীলতা ও আল্লাহর স্মরণে সচেতন হয়, তখন পরিবারে প্রশান্তি নেমে আসে, সমাজে পাপ ও অশ্লীলতা হ্রাস পায় এবং রাষ্ট্রে ন্যায় ও আমানতদারিতা প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবেই একজন মুমিন নর-নারী ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতে সফলতার পথে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এই আয়াত আমাদের আশা জাগায়। কারণ মহান আল্লাহ শুধু নির্দেশ দিয়েই থেমে যাননি; বরং জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি পরম করুণাময় ও অতিশয় ক্ষমাশীল। মানুষ ভুল করবে, কিন্তু তওবা, ইস্তিগফার ও সংশোধনের দরজা সবসময় খোলা। আল্লাহকে অধিক স্মরণ, কোরআনের সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করা এবং সুন্নাহভিত্তিক জীবনযাপন এই তিনটি বিষয় একজন মুমিনকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
পরিশেষে বলা যায়, সূরা আল-আহযাবের এই আয়াত পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্যই এক অনন্য পথনির্দেশনা। যদি আমরা ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবনে এই গুণগুলো বাস্তবায়ন করতে পারি, তবে ইনশাআল্লাহ আমরা পাপমুক্ত জীবন, আত্মিক প্রশান্তি এবং মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য হব। নিশ্চয়ই আমাদের প্রতিপালক মহান রাব্বুল আলামিন পরম করুণাময় ও ক্ষমাশীল।-আমিন
























