রপ্তানিমুখী আলু উৎপাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে এসিআই আলু-১০ (ভ্যালেনসিয়া)

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: আলু একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল যা চাল, গম এবং ভুট্টার পরে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ফসল। ফলন এবং উৎপাদন বিবেচনায় আলু বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাদ্য শস্য। তবে এদেশে উৎপাদিত আলুর বেশিরভাগ জাতই খাবার আলু হিসেবে ব্যবহার হয়, যা শিল্পে ব্যবহার ও রপ্তানি উপযোগী নয়। তাই উপযুক্ত জাতের অভাবে চাহিদা অনুযায়ী আলুর ব্যবহার শিল্পে ও রপ্তানিতে অত্যন্ত নগণ্য।

এরই ধারাবাহিকতায় কৃষি মন্ত্রনালয়ের সময় উপযোগী সিদ্ধান্তের ফলে ইতিমধ্যে শিল্পে ও রপ্তানি উপযোগী অনেকগুলো জাত ছাড়করণ হয়েছে, যার মধ্যে এসিআই কর্তৃক বাজারজাতকৃত এসিআই আলু-১০ (ভ্যালেনসিয়া) অন্যতম। এ জাতটির ৮০% আলুর গড় ওজন ১০০ গ্রামের উপরে হয়ে থাকে, উপরন্ত এর তেল শোষণ ক্ষমতা <৩%, সুগার কন্টেন্ট ০.৩১% এবং ড্রাই ম্যাটার ২২.৫%-এর অধিক হওয়ায় এ জাতটি ফ্রেঞ্চ ফ্রাই তৈরি ও রপ্তানির জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।

এগ্রোটেক বিডি-এর প্রধান জনাব মোশারফ ফরহাদ গণমাধ্যমকে অভিহিত করেন যে, এ বৎসর তিনি রংপুর, দিনাজপুর ও গাইবান্ধা জেলা হতে ৩৭৫ মে.টন ভ্যালেনসিয়া আলু মালয়েশিয়ায় ইতিমধ্যে রপ্তানি করেছেন। তিনি বলেন আকার, আকৃতি ও উজ্জ¦ল আকর্ষনীয় রং এর কারনে বিদেশে ভ্যালেনসিয়া আলুর চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আগামী বৎসর হতে প্রিমিয়াম কোয়ালিটির বক্সে তিনি ভ্যালেনসিয়া আলু মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করবেন।

রংপুর সদর উপজেলার চন্দনপাট ইউনিয়নের বাবুপাড়া গ্রামের আলু চাষী রতন ব্যানার্জী এ বৎসর ১১ একর জমিতে ভ্যালেনসিয়া আলু চাষ করেন। রোপণের ৮০ দিনের মধ্যে ভ্যালেনসিয়া আলু ৮০% রপ্তানি উপযোগী হওয়ার কারনে এ বৎসর অধিক লাভবান হবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রংপুর এর অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জনাব আনোয়ার হোসেন সরেজমিনে ভ্যালেনসিয়া আলুর মাঠ পরিদর্শন করেন এবং এদেশের কৃষকের সমৃদ্ধিতে ভ্যালেনসিয়া আলু রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বিশেষ ভুমিকা পালন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ভ্যালেনসিয়া চাষে স্বল্প পরিমাণ সার ও বালাইনাশক প্রয়োজন হয়, যার ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমে যায়। অধিকন্তু আগাম (৫৫-৬০ দিনের মধ্যে) সংগ্রহ করে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায়। চলতি বৎসর ২০২৪-২০২৫ মৌসুমে ভ্যালেনসিয়া জাতের আলু চাষ করে জয়পুরহাট, বগুড়া, রাজশাহী, রংপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লা ও চাঁদপুর জেলার কৃষকগণ অধিক পরিমাণ মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। রোপণের ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে উত্তোলন করা হলে হেক্টর প্রতি ৪০-৪২ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যায় বলে অধিকাংশ কৃষক মত প্রকাশ করেন।