গবাদিপশুর কৃমিরোগের লক্ষণ, প্রতিকার, আগাম প্রতিরোধ জানালেন বাকৃবির বিশেষজ্ঞ

বাকৃবি প্রতিনিধি-ঃ গবাদিপশুর কৃমি সংক্রমণ একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি গরুর স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে, যা একজন খামারির অর্থনৈতিক ক্ষতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গবাদিপশুর যেসব রোগ হয়, তার অধিকাংশই কৃমিজনিত রোগ। কৃমির সংক্রমণের ফলে গরুর ওজন কমে যায়, দুধ উৎপাদন হ্রাস পায় এবং দীর্ঘমেয়াদে এটি গরুর মৃত্যুর কারণও হতে পারে। এসব বিষয়ে খামারিদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক এবং প্রাণীবিশেষজ্ঞ ড. মো. সহিদুজ্জামান।

অধ্যাপক ড. মো. সহিদুজ্জামান বলেন, "বাংলাদেশে কৃমি রোগের চিকিৎসা অনেকটা অবহেলিত। সাধারণ খামারিরা নিয়মিত কৃমিনাশক খাওয়ান না বললেই চলে। গবাদিপশুর অন্ত্রে বসবাসকারী কৃমি পুষ্টিকর উপাদান শোষণ করে, ফলে পশুটি পুষ্টিহীনতায় ভোগে। এছাড়া শরীরের অন্যান্য অঙ্গে কিছু কিছু কৃমি আক্রমণ করায় পশু মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সঠিক সময়ে কৃমি শনাক্তকরণ ও এর চিকিৎসা না হলে পশু মারা যেতে পারে। তাই পশুকে নিয়মিত কৃমি পরীক্ষা ও কৃমিনাশক খাওয়ানো জরুরি। গরুর কৃমি সংক্রমণ প্রতিরোধে নিয়মিত কৃমিনাশক ব্যবহার, খামার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সংক্রমিত গরুকে আলাদা করা জরুরি। অনেক খামারি নিয়মিত কৃমিনাশক প্রয়োগ করেন না, ফলে গরুর দেহে কৃমি সংক্রমিত হয়ে উৎপাদন কমিয়ে দেয়।"

তিনি আরও জানান, "বর্ষাকালে ও শীতের শুরুতে পরজীবীর আক্রমণ অপেক্ষাকৃত বেশি হয়। এর পূর্বেই খামারিদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং কৃমিনাশক ওষুধ প্রয়োগ করা উত্তম। কৃমি সংক্রমণের কারণগুলোর মধ্যে সংক্রমিত চারণভূমি বা ঘাস খাওয়া, অপরিষ্কার পানি পান করা, সংক্রমিত পশুর মল দ্বারা দূষিত খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত কৃমিনাশক (deworming) না দেওয়া, খামারের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও কৃমি সংক্রমণ সম্পর্কে অসচেতনতা অন্যতম।"

গরুর কৃমি আক্রমণের লক্ষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, "সংক্রমিত পশুর ওজন কমে যায়, দুর্বলতা দেখা দেয়, খাওয়ার অনীহা তৈরি হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে রক্তশূন্যতা হতে পারে। গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে শরীর ফুলে যাওয়া এবং মলে কৃমির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।"

চিকিৎসা নিয়ে অধ্যাপক সহিদুজ্জামান জানান, "অ্যালবেনডাজল, লেভামিজোল, আইভারমেকটিন ও ট্রিকলাবেনডাজলসহ বিভিন্ন কৃমিনাশক ওষুধ সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর। সংক্রমণের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে ওষুধের প্রয়োগ পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়।"

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, "গবাদিপশুর কৃমি সংক্রমণ প্রতিরোধে (বিশেষ করে গরুর ক্ষেত্রে) জন্মের ১৫ দিন থেকে ১ মাসের মধ্যে প্রথম কৃমিনাশক প্রয়োগ করা উচিত এবং এরপর প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর কৃমিনাশক প্রয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি, খামার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।"

অধ্যাপক মনে করেন, "খামারিরা এসব প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অনুসরণ করলে পশুর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব হবে।"