এগ্রিলাইফ ডেস্ক: পেঁয়াজ চাষে লোকসানে কৃষকের আত্মহত্যা; যথাযথ তদন্তপূর্বক ব্যবস্থাগ্রহণ এবং অবিলম্বে কৃষিপণ্য কমিশন গঠন, কৃষিপণ্যের নূন্যতম মূল্য ঘোষণা, সরকারিভাবে সরসরি কৃষককের কাছ থেকে ফসল ক্রয় করা, কৃষি জোনভিত্তিক কমিউনিটি হিমাগার তৈরি করতে হবেঃ খানি বাংলাদেশ।
পেঁয়াজ চাষে লোকসানের কারণে গতকাল ২৮ মার্চ, ২০২৫ মেহেরপুরের মুজিবনগরে কৃষক সাইফুল শেখের (৫৫) বিষপানে আত্মহত্যার ঘটনায় বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি বাংলাদেশ) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
পেঁয়াজের আবাদে লোকসান সইতে না পেরে কৃষক সাইফুল শেখ গত বুধবার তার পেঁয়াজের জমিতে গিয়ে বিষপান করেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে প্রথমে মেহেরপুর সদর হাসপাতাল এবং পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। বৃহস্পতিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
কৃষকরা জানিয়েছেন, পেঁয়াজের বর্তমান দাম চাষের খরচ মেটানোর জন্যও যথেষ্ট নয়। প্রতি বিঘায় খরচ ৪০-৫০ হাজার টাকা হলেও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১শ’ থেকে ১২শ’ টাকা মণ, এবং হাইব্রিড সুখসাগর পেঁয়াজ ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা মণ। গড়ে বিঘাপ্রতি উৎপাদন ২০-৩০ মণ হওয়ায় বিক্রির পর খরচ উঠে আসবে না। একইসাথে দেশব্যাপি ভেজাল পেঁয়াজ বীজ চাষ করে এবং পেঁয়াজের জমিতে ভেজাল কীটনাশক প্রয়োগ করে দেশব্যাপি কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন এবং পেঁয়াজের ফলন বিনষ্ট হয়েছে। পেঁয়াজের পাশাপাশি এ বছর আলু ও টমেটোর দামেও কৃষকরা ব্যাপক লোকসানে পড়েছেন।
কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের লাভজনক মূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়া একটি ঐতিহাসিক শোষণ, যা দীর্ঘদিন ধরে চলমান। এর ফলে নিরুপায় হয়ে কৃষকরা বিভিন্ন সময়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া, নিজেদের সম্পদ বিনষ্ট করা, লোকসানের কারণে চরম দারিদ্র্যে পতিত হওয়া, লোকসানের কারণে ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে নিজস্ব সম্পদ হারানোর মতো করুণ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এই সমস্যা নিরসনে কোনো প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় এটি একটি কাঠামোগত শোষণে রূপ নিয়েছে। আমরা মনে করি লোকসানের কারণে কৃষকের আত্মহত্যা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত বিপর্যয় নয়, বরং এটি কাঠামোগত শোষণ-সহিংসতার একটি দৃশ্যমান স্মারক, যা প্রকারান্তে রাষ্ট্রীয় উদাসীনতা ও অবেহলার প্রতিফলন।
আমরা কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক কৃষক সাইফুল শেখ (৫৫) এর আত্মহত্যা ঘটনা যথাযথ তদন্ত শেষে এই ঘটনাকে অস্বাভাবিক মৃত্যু সম্পর্কিত মামলার( ইউডি মামলা) পরিবর্তে আত্মহত্যার মূল কারণ ‘পেঁয়াজ চাষে লোকসানের কারণে আত্মহত্যা’ উল্লেখপূর্বক মামলা রেকর্ড নিশ্চিত করা এবং একইসাথে নিহত কৃষকের পরিবারকে সরকার থেকে যথাযথ ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি।
কৃষকের এমন আত্মহত্যার মূল কারণ বিবেচনায় নিয়ে কৃষকপর্যায়ে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য এবং লাভজনক মূল্য নিশ্চিতকরণ এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলার প্লাটফর্ম হিসেবে অবিলম্বে কৃষিপণ্য কমিশন গঠন করার দাবি করছি এবং কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি ।
সেই সাথে আগামীতে এই ধরণের আত্মহত্যার ঘটনা প্রতিরোধে কৃষকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা তথা দেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে— কৃষিপণ্যের নূন্যতম মূল্য ঘোষণা, সরকারিভাবে সরসরি কৃষককের কাছ থেকে ফসল ক্রয় করা, কৃষি জোনভিত্তিক কমিউনিটি হিমাগার তৈরি, অতি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঋণের সুদ মওকুফ, এককালীন সাহায্যের তহবিল গঠন, ঋণের কিস্তি পরিশোধের মেয়াদ বৃদ্ধি, প্রণোদনায় কৃষি শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্তকরণ, নারী কৃষকদেরও প্রণোদনায় অন্তর্ভুক্তি, উপকারভোগী নির্বাচনে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, স্বল্পমূল্যে ও সহজ কিস্তিতে প্রকৃত কৃষকদের কৃষি যন্ত্রপাতি প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ এবং কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রদান ও আওতা বৃদ্ধির মাধ্যমে রাষ্ট্রকে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীগণ খানির পক্ষে এই বিবৃতি প্রদান করছি।
খানি’র পক্ষে বিবৃতিদাতা গণ:
১। ড. জয়নুল আবেদীন, সভাপতি, খানি বাংলাদেশ
২। নুরুল আলম মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক, খানি বাংলাদেশ
৩। রেজাউল করিম সিদ্দীক, সাধারণ সম্পাদক, বিসেফ ফাউন্ডেশন
৪। মো. বদরুল আলম, সভাপতি বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন
৫। পাভেল পার্থ, লেখক ও গবেষক
৬। দেলোয়ার জাহান, কৃষক ও সমন্বয়কারী, প্রাকৃতিক কৃষি
৭। আলা উদ্দিন শিকদার, সভাপতি, কেন্দ্রীয় কৃষক মৈত্রী
৮। গৌরাঙ্গ নন্দী; সাংবাদিক