এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: বটিয়াঘাটার বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা লোকজ এর ব্যবস্থাপনায় ঝড়ভাঙ্গা গ্রামে আজ বুধবার বিকেলে ব্রি উদ্ভাবিত বোরো মৌসুমের উচ্চ ফলনশীল ব্রি হাইব্রিড ধান৮ ও ব্রি ধান ১০৮ জাতের নমুনা ফসল কর্তন উৎসব ও মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়।
ব্রি সাতক্ষীরা আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. সাজ্জাদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ রফিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনার উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ নজরুল ইসলাম, সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া এর সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার- মাইক্রো ওয়াটারসেড গভর্ণন্যান্স কৃষিবিদ ড. এস এম ফেরদৌস, উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ আবুবকর সিদ্দিক প্রমুখ।
লোকজ এর দেব প্রসাদ সরকার ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত স্থানীয় কৃষক ব্রীডার আশীষ মন্ডল, শুকুর খন্দকার, শিউলি বেগম ও তিমির বরণ সরকার কৃষক প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য দেন। লোকজ এর নির্বাহী পরিচালক দেব প্রসাদ সরকার ব্রি সাতক্ষীরা কার্যালয়-এর মাধ্যমে ৮৬ কেজি ব্রি হাইব্রিড ধান৮ পেয়ে কৃষকদের কাছে গত রবি মৌসুমে বিতরণ করেন।
মাঠ দিবসের আলোচনার আগে জাতটির নমুনা ফসল কর্তন করে প্রতি হেক্টরে শুকনা হিসেবে ৮৪৭৬ কেজি ফলন পাওয়া যায়। কৃষকরা ব্রি হাইব্রিড ধান৮ ও ব্রি ধান ১০৮ জাতের মাঠে বিদ্যমান ফসল দেখে আনন্দ প্রকাশ করেন।
কৃষিবিদ মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, হাইব্রিড ধান বীজের মূল্য অনেক বেশি। কৃষকদের হাইব্রিড আবাদে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কৃষক পর্যায়ে গত বোরো মৌসুমে বোরো ধান, ভুট্টা ও সূর্যমুখী বীজ প্রণোদনা হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত যা দেখা যায় প্রকৃতি যদি ভাল থাকে তবে ব্যাপক ফলন পাওয়া যাবে।
কৃষিবিদ রফিক মাটির স্বাস্থ্য উন্নয়নে রোপা আমন ধান চাষের জন্য জমিতে সবুজ সার হিসেবে ধৈঞ্চা চাষ করার জন্য অনুরোধ করেন। স্থানীয় কৃষকদের বিষয়টি অবহিত করার জন্য কৃষিবিদ রফিক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে কৃষকদের উঠান বৈঠক করার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি ফসল উৎপাদনে কৃষকদের অসহনীয় কষ্টের কথা উল্লেখ করে বলেন, কৃষকরা আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও উচ্চ ফলনশীল/হাইব্রিড জাত চাষ না করলে খাদ্যের সরবরাহ হুমকির মধ্যে পড়ে যাবে। তাই সকলকে ক্লাইমেট স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি অনুশীলনের জন্য অনুরোধ করেন।
কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম বলেন, ডিএই’র উন্নয়ন প্রকল্প সমুহের অধীন বাস্তবায়িত প্রদর্শনী হতে আশাব্যঞ্জক ফলন পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, ব্রি প্রকাশিত বুকলেটে এসব জাতের ফলন আরও বেশি পাওয়া যাবে বলে জানা যায়। ফলন পার্থক্য কমাতে করনীয় দিক নিয়ে কৃষিবিদ নজরুল আলোচনা করেন।
কৃষিবিদ ড. ফেরদৌস বটিয়াঘাটা এলাকার মজা/পলি মাটি দিয়ে ভরাট হয়ে যাওয়া ছোট বড় খালগুলো পুনঃখননের গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, সরকারের সীমাবদ্ধতা আছে। তাই এলাকার সকলে অংশগ্রহণ করে স্বনির্ভর পদ্ধতিতে খাল খনন করা এখন সময়ের দাবী।
সভাপতির বক্তব্যে ড. সাজ্জাদ বলেন, ব্রি প্রকাশিত বুকলেট ও মাঠে বিদ্যমান ফসলের ফলন পার্থক্য নানা কারণে হতে পারে। বিশেষত ব্রি হাইব্রিড ধান৮ রোপনের সময় ক্লোজ দূরতে রোপন করতে হবে। সুষম সার, প্রয়োজন মাফিক সেচ প্রদান ও অন্তর্বর্তীকালিন পরিচর্যা সঠিক সময়ে করতে পারলে্ এসব ফলন পার্থক্য থাকবে না। মাঠ দিবসে কৃষি বিভাগীয় কর্মকর্তা ও এলাকার প্রগতিশীল কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন।
অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ রফিক মাঠে বিদ্যমান বোরো ধানের মাঠ সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।
সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ব্রি’র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ জিতু। অনুষ্ঠানে ১২০ জন বোরো কৃষক ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন।