রঙের খেলায় বাড়ে ডিম উৎপাদন: লেয়ার ফার্মে রঙিন আলোর গুরুত্ব

এখলাসুল হক: বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প ক্রমাগত আধুনিকায়নের পথে এগিয়ে চলেছে। তবু এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক আমাদের চর্চা ও সচেতনতায় উঠে আসে না। তারই একটি হলো লেয়ার ফার্মে রঙিন আলোর ব্যবহার। আমার দীর্ঘদিনের পোল্ট্রি পেশাগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, মুরগির প্রজনন, আচরণ ও স্বাস্থ্যের উপর আলোর প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বিভিন্ন রঙের আলো মুরগির শারীরিক কার্যক্রম ও মনস্তাত্ত্বিক আচরণে সরাসরি প্রভাব ফেলে।

লাল রঙের আলো (তরঙ্গদৈর্ঘ্য ৬৩০-৭০০ ন্যানোমিটার) প্রজনন বৃদ্ধিতে সবচেয়ে কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে। লাল আলো মুরগির হাইপোথ্যালামাসকে উদ্দীপিত করে প্রজনন পরিপক্কতা ত্বরান্বিত করে। ফলস্বরূপ, ডিম উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। তবে এর জন্য সঠিক তীব্রতার লাল আলো ব্যবহার করা জরুরি। তীব্রতা কম-বেশি হলে কার্যকারিতা হ্রাস পেতে পারে।

প্রায় প্রতিটি ফার্মেই দেখা যায় সাধারণ সাদা আলো ব্যবহার করা হয়। যদিও এটি একটি সাধারণ আলোক উৎস, তবুও এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বৈচিত্র্যপূর্ণ হওয়ায় এটি লাল আলোর মতো প্রজননে তেমন সহায়ক নয়। অন্যদিকে হলুদ বা কমলা আলো মুরগির মস্তিষ্কের হরমোন কার্যক্রমে কিছুটা প্রভাব ফেলে। তবে, লাল আলোর তুলনায় তা অনেক কম। তাই, উচ্চ উৎপাদন নিশ্চিত করতে এই রঙগুলোর উপর নির্ভরশীল হওয়া যুক্তিযুক্ত নয়।

আধুনিক ফার্মে সর্বোত্তম ফল পেতে হলে (+/-) ৬৬০ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের লাল-বর্ণালী LED আলো ব্যবহার করা উচিত। আলো এবং আঁধারের অনুপাতও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ১৬ ঘণ্টা আলো এবং ৮ ঘণ্টা আঁধারে মুরগিকে রাখা হলো সর্বোত্তম অনুশীলন।

বাজারে সহজলভ্য সাধারণ এলইডি বাল্বের পরিবর্তে ‘লাইভস্টক এলইডি বাল্ব’ ব্যবহার করাই অধিক কার্যকর। এই বাল্বগুলো নির্ধারিত লাক্স বজায় রেখে অন্তত পাঁচ বছর স্থায়ী হয়, যা ফার্মের আলোর মান ও ডিম উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

রঙিন আলোর ব্যবহার শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নয়, বরং এটি একটি বৈজ্ঞানিক কৌশল যা সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে ফার্মের উৎপাদনশীলতা বহুগুণে বৃদ্ধি পেতে পারে। ভবিষ্যতের সফল ফার্মিং-এ আলোর এই ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে উঠতে যাচ্ছে।

বিস্তারিত জানতে ইমেইল করুন: This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it.