জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা

রোটারিয়ান ড মো হেমায়েতুল ইসলাম আরিফঃ
ড. মুহাম্মদ ইউনুসের তিনটি জিরো থিউরি

  • জিরো দারিদ্র্য (Zero Poverty)
  • জিরো বেকারত্ব (Zero Unemployment)
  • জিরো কার্বন নিঃসরণ (Zero Carbon Emission)

এই তিনটি জিরো দর্শনকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করা যায় তা নিম্নরূপ:

১. জিরো দারিদ্র্য (Zero Poverty)
করণীয়:
পরিবেশবান্ধব অর্থনৈতিক কার্যক্রম: দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে জীববৈচিত্র্য-সুরক্ষিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করা (যেমন: ইকো-ট্যুরিজম, বনজ সম্পদ ভিত্তিক উদ্যোগ)।
সামাজিক ব্যবসা (Social Business): দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে পরিবেশবান্ধব কৃষি ও পশুপালনে উৎসাহিত করা।
প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি: স্থানীয় জনগণকে পরিবেশ রক্ষা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া।
বিকল্প আয়ের উৎস সৃষ্টি: বননির্ভর মানুষের জন্য বিকল্প পেশা গড়ে তোলা, যাতে তারা বন্যপ্রাণী শিকার বা বন উজাড়ে যুক্ত না হয়।
প্রভাব: দরিদ্রতা হ্রাস পাবে এবং স্থানীয় জনগণ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে আরও সক্রিয় হবে।

২. জিরো বেকারত্ব (Zero Unemployment)
করণীয়:
সবুজ চাকরি (Green Jobs): পরিবেশবান্ধব উদ্যোগে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, যেমন বনায়ন, বন্যপ্রাণী রক্ষণাবেক্ষণ, জলাভূমি পুনরুদ্ধার।
উদ্যোক্তা তৈরি: স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে পরিবেশবান্ধব ব্যবসায় উদ্যোগ নিতে উৎসাহিত করা।
প্রযুক্তির ব্যবহার: নবায়নযোগ্য শক্তি (সোলার প্যানেল স্থাপন) এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি।
পরিবেশ রক্ষায় কর্মসূচি: বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণ, বন রক্ষণাবেক্ষণ এবং পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
প্রভাব: স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং মানুষ অবৈধ শিকার বা বন নিধনে যুক্ত হবে না।

৩. জিরো কার্বন নিঃসরণ (Zero Carbon Emission)
করণীয়:
নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার: সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি এবং জৈবশক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি।
টেকসই কৃষি পদ্ধতি: পরিবেশবান্ধব কৃষি চর্চা এবং রাসায়নিক সারের বিকল্প ব্যবহার।
পরিবহন খাতে পরিবর্তন: বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং গণপরিবহনকে উৎসাহিত করা।
শিল্পে কার্বন নিঃসরণ কমানো: শিল্প-কারখানায় কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য প্রযুক্তি উন্নয়ন।
বনায়ন ও বন সংরক্ষণ: ব্যাপক বৃক্ষরোপণ এবং বন উজাড় প্রতিরোধ।
প্রভাব: গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাস পাবে।

সমন্বিত প্রয়োগ:
দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে পরিবেশ রক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করে আয় এবং জীবিকা নিশ্চিত করা।
নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসার ঘটিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও বনাঞ্চল রক্ষার মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ কমানো।
স্থানীয় মানুষদের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা।
প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করা।

উপসংহার:
ড. মুহাম্মদ ইউনুসের তিনটি জিরো দর্শন কেবল একটি অর্থনৈতিক মডেল নয়, এটি একটি টেকসই উন্নয়ন রোডম্যাপ। দারিদ্র্য দূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের মাধ্যমে আমরা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবকে সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারি।