কৃত্রিম সারের নির্ভরতা কমাবে স্ট্রুভাইট সমৃদ্ধ কম্পোস্ট

বাকৃবি প্রতিনিধি: দেশের বিভিন্ন কর্মশালায় কৃত্রিম সারের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে আলোচনা হলেও এর ব্যবহার কমেনি। বরং বহুগুণে বেড়েছে। ফলে মাটির মৌলিক গঠনের পরিবর্তন হচ্ছে। এতে ফলনও কমে যাচ্ছে। শেরপুর জেলার কৃষক কালাম আক্ষেপ করে জানান, "পাঁচ বছর আগে যে ফলন পেতাম, এখন তার দুই-তৃতীয়াংশ পাই। কৃত্রিম সার না দিলে উৎপাদনই হয় না। বাজারে সারের দাম বেশি, কিন্তু ফসলের দাম কম। প্রতি বছর লোকসান গুনতে হয়।"

কৃষকদের এই সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদল লেয়ার মুরগির বিষ্ঠা থেকে স্ট্রুভাইট সমৃদ্ধ কম্পোস্ট সার তৈরি করেছেন। এই কম্পোস্ট দামে সস্তার পাশাপাশি উৎপাদনও সহজ। লেয়ার মুরগির বিষ্ঠার সঙ্গে কাঠের গুঁড়া ও ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড মিশিয়ে বায়ু সঞ্চালনের মাধ্যমে এই কম্পোস্ট তৈরি করা হয়।

গবেষণায় প্রধান গবেষক হিসেবে ছিলেন পশুপালন অনুষ‌দের পশুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোখলেছুর রহমান। সহযোগী গবেষক ছিলেন অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন সুমন এবং পিএইচডি গবেষক মো. মোর্শেদ হাসান মোস্তফা। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে তিন বছর ধরে এই গবেষণা প্রকল্পটি চলমান রয়েছে।

ড. মোখলেছুর রহমান জানান, "গবেষণায় দেখা গেছে, স্ট্রুভাইট সমৃদ্ধ কম্পোস্ট ব্যবহার করলে ভুট্টা ও পাকচং ঘাসের ফলন প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় বেশি হয়। স্ট্রুভাইট এক ধরনের দানাদার ফসফেট খনিজ, যা ম্যাগনেসিয়াম অ্যামোনিয়াম ফসফেটের সমন্বয়ে তৈরি। এটি মাটির উর্বরতা বাড়ানোর পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব একটি সমাধান।"

অধ্যাপক আরও জানান, বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসি) তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে ১১ কোটি লেয়ার মুরগি পালন করা হয়। এত বিপুলসংখ্যক মুরগির বিষ্ঠাকে স্ট্রুভাইট কম্পোস্টে রূপান্তর করা গেলে কৃত্রিম সারের ওপর নির্ভরতা বহুলাংশে কমে যাবে। কৃষকরা এই কম্পোস্ট ব্যবহার করে অধিক লাভবান হবেন এবং রাসায়‌নিকমুক্ত খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত হবে।