সমীরণ বিশ্বাস: বাংলাদেশে পেঁপে চাষের সম্ভাবনা ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এটি একটি উচ্চমূল্যের ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন ফল যা দেশের কৃষি ও পুষ্টি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশে উৎপাদিত পেঁপে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন A, C, ও প্যাপেইন এনজাইম, যা হজমে সহায়ক এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই আমাদের দেশের কৃষক ভাইদের পেঁপে চাষে নিম্নত্ব বিষয়গুলির প্রতি গুরুত্ব আরোপ অতীব জরুরি। পেঁপে গাছের স্বাস্থ্য ও ফলন বৃদ্ধিতে জিংক, বোরন এবং ম্যাগনেসিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পরিমাণ জানা না থাকলে ক্ষতিও হতে পারে ! চলুন জেনে নিই বছরে কতটুকু এবং কীভাবে প্রয়োগ করতে হয় ।
জিংক :
জিংক এর কার্যকারিতা পাতা হলুদ হওয়া থেকে রক্ষা করা এবং গাছের বৃদ্ধি সঠিক রাখা। জিংক সালফেটের পরিমাণ প্রতি গাছে ১ বছরে মাটিতে প্রয়োগ ৫-১০ গ্রাম ২-৩ বার ভাগ করে প্রয়োগ করতে হবে । স্প্রে ০.৫-১ গ্রাম/লিটার পানি, ৩-৪ বার ফুল ও ফল ধারণের আগে।
বোরন :
বোরন এর কার্যকারিতা ফল ফাটা, বিকৃত ফল রোধ। বোরাক্স বা বোরিক অ্যাসিডের পরিমাণ প্রতি গাছে বছরে মাটিতে প্রয়োগ ২-৪ গ্রাম ২ বার ভাগ করে। স্প্রে০.৫ গ্রাম/লিটার পানি, ২ বার ফুল আসার সময় ও ফল ধারণের পর।
ম্যাগনেসিয়াম:
ম্যাগনেসিয়াম এর কার্যকারিতাপাতা হলুদ ক্লোরোসিস দূর করা। ম্যাগনেসিয়াম এর পরিমাণ প্রতি গাছে বছরে মাটিতে প্রয়োগ ১০০-২০০ গ্রাম ৪ বার ভাগ করে, প্রতি ৩ মাসে ৫০ গ্রাম। স্প্রে ৫ গ্রাম/লিটার পানি, মাসে ১ বার হলুদ পাতা দেখা গেলে।
কখন ব্যবহার করবেন (সময়সূচি) :
জিংক ও বোরন ফুল ফোটার আগে ও ফল ধারণের সময়। ম্যাগনেসিয়াম বর্ষা বা সেচের পর মাটিতে প্রয়োগ করুন। স্প্রে সকাল বা বিকালে করুন, রোদে নয়।
সতর্কতা :
অতিরিক্ত ব্যবহার গাছের ক্ষতি করতে পারে, বিশেষ করে বোরন বিষাক্ততা ঘটায়। বোরন বিষাক্ততা এড়াতে পরিমাণের বেশি কখনোই দেবেন না।
বাংলাদেশে কৃষক ভাইদের পেঁপে চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। পেঁপের পাতা ও কাঁচা ফল ওষুধ শিল্পে ব্যবহৃত হয়, বিশেষত ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসায় পাতা কার্যকর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যথাযথ প্রশিক্ষণ, আধুনিক প্রযুক্তি, এবং বাজারজাতকরণের সুযোগ তৈরি করা গেলে এটি কৃষি অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
লেখক: কৃষি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ , ঢাকা।